সাড়ে তিন বছরেও তনু হত্যার বিচার হলো না কেন, প্রশ্ন মায়ের

ডেস্ক রিপোর্ট• যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদের কারণে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার সাত মাসের মধ্যে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার সাড়ে তিন বছরেও খুনি শনাক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার পরিবারের সদস্যেরা এবং কুমিল্লার বিশিষ্টজনেরা। নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তনুর মা আনোয়ারা বেগম প্রশ্ন তুলেন, ‘নুসরাত হত্যার বিচার এত কম সময়ে হলে তবে সাড়ে তিন বছরেও কেন তনু হত্যার বিচার হলো না?’

সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের সাড়ে তিন বছর পার হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে মামলার অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে তনুর মা আনোয়ারা বেগম এ প্রশ্ন করেন।

তনুর পরিবার জানায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে সেনানিবাসের ভেতরে একটি জঙ্গলে তনুর লাশ পান। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট।

তনুর পরিবার আরও জানায়, গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানায়। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা– এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।

এ ব্যাপারে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সিআইডি যোগাযোগ করছে না। ১৫দিন আগে সিআইডি অফিসে ফোন দিয়েছি। তারা দেখছে বলে জানিয়েছে। সারাদিন টিভিতে নুসরাত হত্যাকারীদের খবর দেখলাম। খবর দেখতে দেখতে আফসোস করেছি, তনুর হত্যাকারীদের যদি এরকম সাজা হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘তনুর বাবা এবং আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আগের মতো বিভিন্ন অফিসে যেতে পারি না। মৃত্যুর আগে মেয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মেয়ের হত্যার বিচার চাওয়ার সুযোগ পেলে অন্তরে শান্তি পেতাম।’

তনুর মা দাবি করেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারীদের পরিচয় বেরিয়ে আসবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়।’

এ ব্যাপারে কুমিল্লার ‘সাংবাদিক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী সংসদে’র সহ-সভাপতি ডা. গোলাম শাহজাহান বলেন, ‘নুসরাতের হত্যাকারীদের দ্রুততম সময়ে সাজা দেওয়া ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। তার মতো তনুর হত্যাকারীরাও সাজা পাবে, এমন প্রত্যাশা সবার।’

গণজাগরণ মঞ্চ, কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, ‘তনু হত্যা মামলার তদন্তে সিআইডি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে; যা খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই, দ্রুত তনু হত্যার আসামি শনাক্ত হোক। নুসরাতের মতো তনুর হত্যাকারীদেরও সাজা হোক।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাজে কোনও স্থবিরতা নেই; আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ডিএনএ পরীক্ষা এবং ম্যাচিং করার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। ডিএনএ রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। রিপোর্ট পেলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।’