সাড়ে ৪ বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ১২২৩ মামলা

বিশেষ প্রতিবেদক •

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ খুন, অপহরণ, ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়িত। গত সাড়ে ৪ বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে ১ হাজার ২২৩টি মামলা হয়েছে। এতে আসামি ৩ হাজার ৮৫০ জন।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পগুলোর ভেতরে ১৫-২০টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড। এখানে প্রতিদিন প্রায় শত কোটি টাকার ইয়াবা-আইস ও সোনা চোরাচালানের লেনদেন হয়। শুধু তাই নয়, দেশের সব ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নাকি এসব ক্যাম্প থেকেই হয়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মীদের দাবি- অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে ১৫ থেকে ২০টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী সক্রিয়। প্রতিটি বাহিনীতে ৩০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে। সন্ধ্যার পর ক্যাম্পগুলো হয়ে ওঠে অপরাধের অভয়ারণ্য। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি ও খুনাখুনিতে জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা।

নুরুল কবির নামে এক রোহিঙ্গা মাদক কারবারি বলেন, ক্যাম্পে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বেশি ইয়াবা বেচাকেনা হয়। অন্তত ৩০ থেকে ৪০ লাখ ইয়াবা প্রতিদিন হাতবদল হচ্ছে। মূলত ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে অন্তত অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যমতে, গত সাড়ে চার বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে ১ হাজার ২২৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৯টি খুন, ৭৬২টি মাদক, ২৮টি মানবপাচার, ৯৭টি অস্ত্র, ৮৫টি ধর্ষণ ও ১৯টি ডাকাতি, ৪৪টি অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় এবং অন্যান্য অপরাধে মামলা হয়েছে ১০৯টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩ হাজার ৮৫০ জন রোহিঙ্গাকে। এছাড়া গেল ৫৫ মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষে ২২৬ জন নিহত ও ৩৫৪ জন আহত হয়েছে।

১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী থাকতে পারে। ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এপিবিএনের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।

উখিয়া থানার ওসি সঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, কোনো না কোনো অপরাধে প্রতিদিন রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। মূলত ক্যাম্পে অলস সময় কাটাতে গিয়ে এবং অল্প সময়ে ধনী হওয়ার নেশায় রোহিঙ্গারা খুন ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধে যারা জড়িত, তাদের কোনো ছাড় নেই। এরই মধ্যে পুলিশ অনেক রোহিঙ্গা অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে। বেশ কয়েকটি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক।