সীমান্তের অবৈধ সিগারেট সম্রাট শালা-দুলাভাই

  • * অবৈধ ব্যবসায় বনে গেছেন কোটিপতি

  • * নামে-বেনামে অটেল সম্পদ

  • * সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি জরুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক :


দেশে হঠাৎ করেই আঙ্গুল ফুলে বনে যাওয়া ধনী ব্যক্তিদের নজরদারি করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ( সিআইডি)। এসব ধনী ব্যাক্তিদের অর্থের উৎস যদি মাদক ও অবৈধ চোরাইমাল ব্যবসার মাধ্যমে হয়ে থাকে তাহলে তাদের আইনের আওতায় এনে অবৈধ উপায়ে আয়কৃত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্টীয় কোষাগারে জমা করা হবে বলে এক প্রেসব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

এদিকে উখিয়ায়ও দেখা মিলেছে হঠাৎ বনে যাওয়া কোটিপতির সংখ্যা । এদের মধ্যে অবৈধভাবে আয়কৃত সম্পদ অর্জন করা ঘুমধুমের আজুখাইয়া এলাকার সাইফুল ইসলাম মামুন ও উখিয়া উত্তরপুকুরিয়া এলাকার রায়হান নামে দুই যুবক শীর্ষস্থান দখল করেছেন।

তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে এসেছে, তারা দুজনই রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মায়ানমার থেকে অবৈধ সিগারেটসহ বিভিন্ন চোরাইপন্য এনে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে অটেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

তারা দুজনই শালা-দুলাভাইয়ের সম্পর্ক। তাদের রয়েছে ছোট বড় বিশাল সিন্ডিকেট। দুলাভাই সাইফুল মায়ানমার থেকে বড় চালান এনে পুকুরিয়া রায়হানের বাড়িতে মালগুলো স্টক করে সু-কৌশলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব মাল পাচার করতেন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা এসব অবৈধ ব্যবসায় বর্তমানে সফল হয়ে নামে বেনামে গড়ে তুলেন অনেজ সম্পদ। সম্প্রতি তারা দুজনে কোটবাজারে দুইটি দোকান ক্রয় করেছেন প্রায় ৭০ লক্ষ টাকায়। নামে-বেনামে কক্সবাজারসহ উখিয়ার বিভিন্ন জায়গায় জমি ক্র‍য় করেছেন কোটি টাকার। এই দুই যুবকের বয়স হবে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ২৬ বছর। তারা এত অল্প বয়সে এসব অবৈধ ব্যবসা করে উখিয়াসহ পুরো কুতুপালং রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া ২০২২ সালে সাইফুল ইসলাম ২৩ বছর বয়সে অবৈধ টাকায় নিজেকে পাপমুক্ত করতে ওমরা হজ্ব পালন করেন।

এ অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ২টি সিএনজি ভর্তি সিগারেট ও ৫০ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে পাচারকালে বিজিবি ধাওয়া করলে কামরিয়াবিল এসে জনগনের হাতে লুঠপাট হয়ে যায় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার অবৈধ মালামাল। এছাড়া ২০২৩ সালের আরো একটি ঘটনা সর্ণের বার মোটরসাইকেলযোগে পাচারের কালে রেজুখাল ব্রিজে বিজিবির চেকপোস্ট তল্লাশীতে প্রায় কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণের বারসহ এক পাচারকারীকে আটক করছিল বিজিবি। এসব পৃথক পৃথক ঘটনা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সিন্ডিকেট প্রধানরা ধরাছোঁয়ার বাহিরে বলে ছবি দিয়ে গনহারে সংবাদ প্রচার হয়ছিল।

এসবের পর থেকে তারা সু কৌশলে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন। সম্প্রতি মায়ানমারের অভ্যান্তরে পরিস্থিতি উত্তাল থাকায় প্রায় ৬ মাস যাবত দেশে বড় কোন চালান না আসলে এসব অবৈধ কালো টাকাকে সাদা করতে হাতে নিচ্ছেন নতুন নতুন দোকান ব্যবসা। সেখানে খাবার হোটেল, কসমেটিক, কাপড়সহ বিভিন্ন ব্যবসায় তারা বিনিয়োগ করতেছেন।

সম্প্রতি সিইডি প্রধানের বক্তব্য অনুযায়ী অবৈধ কালো টাকার কোন সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ ক্রোধ করার কথা থাকলেও তাদের দুজনকে এখনো নজরে আনতে পারেনি সিআইডির কর্মকর্তারা।

স্থানীয়রা দাবি করছেন, তারা প্রকাশ্যে এসব অবৈধ ব্যবসা করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রশাসন বা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ইনভেস্টিগেশন করতে দেখা যায়নি। তারা এত অল্প বয়সে এত টাকার উৎস কি জানতে ছেয়ে দুদুকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জবাবদিহিতায় আনলে সকল গোঁমর ফাস হবে। তাছাড়া তাদের বিষয়ে কুতুপালংসহ অনেক প্রশাসন ও অবগত রয়েছেন। কিন্তু সকলেই নিরব দর্শকের ভুমিকায় তারা দিনপার করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুতুপালংয়ের এক স্থানীয় যুবক তাদের সহযোগী জানায়, সাইফুল মূলত সীমান্তবর্তী এলাকার ছেলে তার সাথে কানেকশন রয়েছে মায়ানমারের বড় বড় সিন্ডিকেটের সাথে। সেখান থেকে তারা অবৈধ বিভিন্ন পন্য এনে এইখানে ছোট বড় ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন। তারা মূলত নিজেরা এসব পাচার করেন না। তারা, সর্ণের বার, সিগারেট, অন্যন্য জিনিস গুনে বুঝে তাদের বিশ্বস্ত পাচারকারী ও ছোট ব্যবসায়ীদের তুলে দেন। আমি কিছুদিন তাদের সাথে ছিলাম। বর্তমানে বর্ডার বন্ধ থাকায় এসব ছেড়ে দিয়ে অন্যকাজে লিপ্ত হয়েছি।

স্থানীয় একাধিক সুত্র বলছে, সাইফুল অবৈধ সিগারেট ব্যবসা করে সাধারণ মানুষ ছাড়া অনেক প্রশাসনের লোকজন ও জানে। এটা নতুন কিছু নই। সাইফুল এবং তার দুলাভাই শাহা জালাল অবৈধ সিগারেট ব্যবসার সম্রাট বললেও চলে। চিহ্নিত অবৈধ চোরাইমাল ব্যবসায়ী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরপুকুরিয়ার এক ব্যাক্তি জানায়, সাইফুল হচ্ছে রায়হানের মামাতো ভাই। কিছুদিন আগে রায়হানের ছোট বোন সাইফুলের সাথে আকদা হয়। সামনে বিবাহ হবে। তারা দু-দিক দিয়ে আত্বীয় এখন।

অবৈধ ব্যবসায় রায়হান জড়িত আছে কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি জানায়, রায়হান এসব কম বেশি করে এলাকায় সকলের জানা। তার বাড়িতে র‍্যাব বিজিবি নিয়মিত আসা যাওয়া করতেও দেখা যায়। মানুষে বলে ইনফরমেশন ছিল তাই তাদের বাড়ি তল্লাশী করতে আসে প্রশাসন । আপনি এলাকার মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করলে বিস্তারিত পেয়ে যাবেন।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ স্পষ্ট বক্তব্য অপরাধী যেই হউক না কেন ছাড় দেওয়া হবে না। যত ক্ষমতাশালী ব্যাক্তি হউক না কেন আইনের উর্ধে কেউ নয়। সুতরাং অপরাধীদের তথ্য দিন তদন্তপুর্বক প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।