সেই রোহিঙ্গারা ব্যবহার করে মহেশখালী, শাহপরীরদ্বীপ ও শাপলাপুর পয়েন্ট

সুজাউদ্দিন রুবেল ◑

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন রোহিঙ্গারা। সীমান্তে কড়া নজরদারির পরও ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের যথাযথ তৎপরতার অভাবেই ঘটছে এমন অপরাধ। আর সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তৎপরতা আরও বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও কোস্টগার্ড।

সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাবার সময় গত বুধবার রাতে টেকনাফের শীলবুনিয়া থেকে ৪ শতাধিক রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। তারা কক্সবাজার সমুদ্র উপক‚লের মহেশখালী, শাহপরীর দ্বীপ ও শাপলাপুর পয়েন্ট ব্যবহার করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাবার জন্য সাগর পাড়ি দেয়। এসব পয়েন্টে বলা হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান। অথচ এই পয়েন্টগুলো দিয়েই দুই মাস আগে নৌকায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা মালয়েশিয়ায় সাগর পাড়ি দিয়েছিল বলে দাবি রোহিঙ্গাদের।

এব্যাপারে কথা হয় উদ্ধার হওয়ার উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্প ৫ এর রোহিঙ্গা আনোয়ার ইসলাম এর সাথে। তিনি বলেন, ‘টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে ওইখানে একটা ঝাউবাগান রয়েছে। ওই ঝাউবাগান দিয়ে ছোট নৌকায় উঠেছি। আমরা সবাই মিলে প্রায় ২০-৩৫ জন ওই নৌকায় উঠে তারপর বড় একটি ট্রলারে উঠি।’

উদ্ধার হওয়ার আরেক রোহিঙ্গার নারী রমিজা বেগম বলেন, ‘আমরা প্রথমে কক্সবাজার যায়। দালালরা কক্সবাজারে ১০ দিন রেখেছে এবং ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। এরপর একটা ছেলে এসে আমাদেরকে মহেশখালী নিয়ে যায়। মহেশখালী থেকে দিনে দিনে ট্রলারে তুলে ফেলে দালালরা। ট্রলারে ৪দিন ভাসতে থাকি।’

আরেক রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জোহার বলেন, ‘টেকনাফের শাপলাপুর ছিলাম, শাপলাপুর থেকে দালাল মাঝিরা মোবাইলে ফোন করে ট্রলারে তুলে, তবে কাউকে চিনি না। ট্রলারে উঠার সময় কেউ দেখেনি। পুলিশ, সরকার কিংবা কোন প্রশাসনই দেখেনি। তারপর ট্রলারে তুলে এরপর বড় ট্রলারে উঠে যায়।’

এদিকে স্থানীয়দের দাবি, উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি আশ্রয় শিবির ও সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তারপরও কীভাবে রোহিঙ্গারা বার বার সাগরপাড়ি দিচ্ছেন। এই জন্য প্রশাসনের যথাযথ তৎপরতার অভাবকেই দায়ী করছেন তারা।

টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, প্রায় সময় দেখি সীমান্ত দিয়ে ৫-১০ জন রোহিঙ্গারা সীমান্তের নানা পয়েন্ট ব্যবহার করে মালয়েশিয়া যাবার জন্য ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে। এই জন্য প্রথমে রোহিঙ্গারা সিএনজি, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করছে। এরপর সমুদ্র উপকূলের পয়েন্ট ব্যবহার ছোট ছোট নৌকায় করে বড় ট্রলারে উঠছে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশাসনের যথাযথ নজরদারি হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে যে বিদেশি ট্রলারটি ফিরে এল সেটি সেন্টমার্টিন থেকে শাপলাপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ কিলোমিটার যে যাত্রা সেটি কিভাবে করল। এখানে তো অনেক বাহিনী থাকার কথা, এদের নজরে আসলে না কেন?

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আব্দু সালাম বলেন, সীমান্ত জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। এত নিরাপত্তা বেষ্টনী মাঝেও রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কিভাবে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে সাগরপাড়ি দিচ্ছে? রোহিঙ্গারা কীভাবে মানবপাচার হচ্ছে এটা জানা জরুরি।

তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও কোস্টগার্ড তাদের বিজিবি সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে সমুদ্র উপক‚লে আরও তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

এব্যাপারে টেকনাফস্থ বিজিবি ২ ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক মেজর রুবায়েত কবির বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের যে এলাকাটা রয়েছে এটা কিন্তু সীমান্ত এলাকার মধ্যে পড়ে না। এখানে বিজিবির দুটি, সেনা বাহিনীর একটি ও পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা হচ্ছে, এতবড় এলাকা টহল দিয়ে প্রতিরোধ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এখন যারা এই এলাকা দিয়ে মানবপাচার করছে তারা রাতের আঁধারে এই সুযোগগুলো নিচ্ছে। তাই মানবপাচার এই এলাকা দিয়ে বন্ধ করতে হলে সমুদ্রে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

টেকনাফ কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার সোহেল রানা বলেন, আমরা অনেক সীমিত জনবল দিয়ে অনেক বড় একটা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছি। আমাদের জনবলের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও অনেক বড় এই সীমান্ত সীমিত জনবল দিয়ে পাহারা দিচ্ছি। তারপরও বলল, সীমান্তে পাহারা জোরদার আছে বিদায় মালয়েশিয়াগামি ৪’শ রোহিঙ্গাকে ধরতে পেরেছি। যদি আমাদের পাহারা না থাকতো তাহলে ৫ মিনিটের মধ্যে সবাই পালিয়ে কিন্তু লোকালয়ে চলে যেত।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাসেও সাগরপাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাবার সময় সেন্টমার্টিনে ট্রলারডুবিতে ২১ জন নিহত ও ৭৩ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। আর বুধবার রাতে উদ্ধার করা হয় আরও ৪’শ জন রোহিঙ্গাকে।