হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন তিনবারের আ.লীগ সংসদ সদস্য

ডেস্ক রিপোর্ট • রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তিনবারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ‘হাতজোড়’ করে ক্ষমা চাইছেন, একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম তার ফেসবুক পেজে ছবি আপলোড করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়।

ছবিটি গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের। ভাইরাল হওয়া ওই ছবিটিতে দেখা যায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ প্রভাবশালী নেতারা বসে আছেন।

আর টেবিলের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছেন। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

আরেকটি ছবিতে ওমর ফারুক চৌধুরী হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে থাকলেও আসাদকে চেয়ার পেছনে ঠেলে সরে যেতে দেখা যায়। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের মধ্যে থাকা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে গত শুক্রবার। কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় ডেকে এই বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেন। এরপর ৪ ডিসেম্বর সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করে তা সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে।

তবে এই দুই নেতার বিরোধ উস্কে দিতে রোববার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল করা হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেন মোহনপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম। তিনি ফারুক চৌধুরীরই অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তারপর থেকে রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ছবিটি পোস্ট করছেন। অনেকেই পাঠাচ্ছেন ম্যাসেঞ্জারে।

ভাইরাল হওয়া ওই ছবি নিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘যারা ছবিটা ফেসবুকে পোস্ট করছেন তারাই ভালো বলতে পারবে। তাদেরকেই জিজ্ঞেস করেন। সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতা জানান, ওই বৈঠকে যখন ফারুক চৌধুরী ও আসাদ একে-অপরের বিরুদ্ধে কি বলেছেন, এমন নিয়ে আলোচনা হয়। এরই এক পর্যায়ে ওমর ফারুক চৌধুরী উঠে কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে হাতজোড় করে বলেন, ‘অনেক হলো, এবার আমাকে মুক্তি দেন। আমাকে কমিটি থেকে বাদ দিয়ে দেন অথবা জেলা কমিটি ভেঙে দেন।

এই কমিটির চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, জামায়াত-বিএনপি’র পৃষ্ঠপোষক নেতারা যেভাবে আমাকে, আমার জন্মদাতা শহীদ পিতাকে নিয়ে চরম মিথ্যাচার ও নোংরামি করছে, সেসব আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমি আমার শহীদ পিতার সম্মান রক্ষা করতে চাই। আমি কোনো পদে না থেকেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের একজন সৈনিক হিসাবে কাজ করতে চাই।

আগামী সম্মেলনের আগে ফারুক চৌধুরী ও আসাদের মধ্যে থাকা দ্বন্দ্ব উস্কে দিতে এমনটা করা হয়েছে বলে দাবি একাধিক নেতার। বিষয়টি কানে গেছে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চঞ্চল বলেন, কেন্দ্র যখন দুই নেতার বিরোধ মিটিয়ে একটি সফল সম্মেলনের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন একটি মহল বিরোধ জিইয়ে রেখে ফায়দা নিতে চাচ্ছে। মূলত দুই নেতার বিরোধ উস্কে দিতে ছবিটি ভাইরাল করে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন থেকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তাদের মধ্যে কথা বলাবলি পর্যন্তও বন্ধ রয়েছে।