সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার

এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন •

সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। দখল বাণিজ্য, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির অসচেতনতা ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে দৃষ্টিনন্দন এ সৈকতের বালিয়াড়ি পরিণত হয়েছে আবর্জনার স্তুপে। যা দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।

পর্যটকদের অভিযোগ, সমুদ্র সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখতে কমিটি গঠন করা হলেও তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ কাগজে-কলমে। বাস্তবে এ কমিটির অকার্যকর।

সমুদ্র সৈকত অপরিচ্ছন্ন থাকলেও ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফ গার্ডদের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা। তারা জানান, সৈকতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখা ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে ট্যুরিস্ট পুলিশ লাইফ গার্ডরা।

সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস-রেস্ট হাউস। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য একাধিক পয়েন্ট দিয়ে নির্গত হচ্ছে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে। এছাড়া সমুদ্রে ভেসে আবর্জনা তো রয়েছেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী, ঝাউবন, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, ইনানিসহ সৈকতের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পড়ে আছে পরিত্যক্ত ডাবের ছোবড়া, ডিমের খোসা, পলিথিন, চিপসের খালি প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল ও সামুদ্রিক বর্জ্য। অনেক স্থানে আবার আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে এসব আবর্জনা। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা সুগন্ধা পয়েন্টের। এ পয়েন্ট দিয়ে পর্যটকদের সৈকতে নামতে হলে পাড়ি দিতে হয় ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধের কারণে নাক ঢেকে হাঁটতেও কষ্ট হয় পর্যটকদের।

কয়েকজন পর্যটক বলেন, সৈকতের আশপাশে যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক, বাঁশের ঝুড়ি, ডাবের ছোবড়াসহ অন্যান্য আবর্জনা। রাস্তাও চলাচলের উপযোগী নেই। হোটেল-মোটেলসহ অন্যান্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের কারণে পর্যটন নগরীর চেয়ে বাণিজ্যিক নগরীই বেশি মনে হয় কক্সবাজারকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশ দূষণ ও সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি নোংরা হওয়ার অন্যতম কারণ প্রভাবশালী মহলের দখলবাজি। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে এক শ্রেণির সুবিধাবাধী। এতে ব্যাহত হচ্ছে কক্সবাজারের নগরায়ন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আমাদের অহংকার। দখল-দূষণ, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় তিলে তিলে পৃথিবীর দীর্ঘতম এ সৈকতের আজ এমন দুরবস্থা।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ মোহাম্মদ নাজমুল হুদা জানান, বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় সমুদ্র ও সৈকত দিনদিন দূষিত হয়ে পড়ছে। এসটিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস-রেস্ট হাউস মালিকদের একাধিকবার তাগাদা দেয়া হয়েছে। তারা সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করলে সমুদ্র সৈকত ও সাগর আরো নোংরা হবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফোরকান আহমদ জানান, সৈকতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার দায়িত্ব বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই সমুদ্র সৈকত ও কক্সবাজার শহরে নগরায়ন করা হচ্ছে। অসাধু ব্যক্তিদের কারণে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েও সফল হওয়া যাচ্ছে না।

কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ জানান, সৈকতের ময়লা-আবর্জনা দূর করতে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সবাইকে নিয়ে দ্রুত বৈঠক করে পদক্ষেপ নেয়া হবে। অপরিকল্পিত স্থাপনা ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কোনো প্রভাবশালীকেই ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নেয়া হবে।