প্রক্সি দিয়ে চাকরিতে ঢুকে কোটি টাকার মালিক

উখিয়া হাসপাতালে দূর্নীতির মহারাজা ফরিদ!

নিজস্ব প্রতিবেদক :

তৃতীয় শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী হয়েও কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি, নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরি করে যিনি উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে অনিয়ম-দুনীর্তির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসের ওয়েবসাইটে কর্মচারী তালিকায় ৬৪ নম্বরে থাকলেও অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদ নিয়ে নিজেকে শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের কাতারে নিয়ে গেছেন উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডস্থ ডেইলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ আলম।

প্রথমে বেসরকারি একটি কলেজে পিয়ন হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা ফরিদ ১৫ বছর আগে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

অভিযোগ আছে, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রক্সি দিয়ে ভূয়া শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদের মাধ্যমে এই পদে উত্তীর্ণ হন ফরিদ।

স্থানীয় হওয়ার সুবাদে পদটি হয়ে ওঠে ফরিদের অবৈধ উপার্জনের ফাঁদ। হাসপাতালে খাবার সরবরাহে অনিয়ম, ভূয়া বিল ভাউচার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক কর্মসূচিতে কর্মরত এনজিওগুলোর কাছ থেকে মাসোহারা,  সরকারি ওষুধ ও হাসপাতালের  সরঞ্জাম চুরি করে বিক্রি সহ নানা অপকর্ম করে নিজের পকেট ফুলিয়েই চলেছেন ফরিদ।

উখিয়া-টেকনাফ মহাসড়ক লাগোয়া হাসপাতাল ফটকের বিপরীত পার্শ্বে একটু দূরে গেলেই দেখা মিলবে ২০ শতক জমির উপর তৈরি প্রাচীরঘেরা চারতলা ভবন যার সম্মুখে বহুজাতিক দাতব্য সংস্থার ভাড়ায় নেওয়া অফিস। ফরিদ তার অবৈধ অর্থে বানিয়েছেন কোটিমূল্যের এই সম্পদ।

শুধু অবৈধ সম্পদ অর্জনই নয় নৈতিকস্ফলন জনিত কারণে ২০১৬ সালে তদন্তের মুখোমুখি হয়ে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালের এক নার্সকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।

অনুসন্ধান বলছে, বিক্রির জন্য নিষিদ্ধ সরকারি ঔষধ চুরির পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাচার করে ফরিদের নিয়ন্ত্রণাধীন সিন্ডিকেট।

দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে এম্বুল্যান্স সেবা বন্ধ থাকলেও থেমে নেই এম্বুল্যান্সের নামে বিভিন্ন ভূয়া বিল ভাউচার করে ফরিদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অপপ্রয়াস।

রোগীদের জন্য বিনামূল্যে সরবরাহ করা খাবারে চলে ফরিদের বড় অনিয়ম, মানহীন ও পরিমাপে কম দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয় মোটা অংকের টাকা। সুরুত আলম নামে কথিত ঠিকাদার থাকলেও বড় বাজেটের এই কর্মযজ্ঞের নিয়ন্ত্রক ফরিদ সিন্ডিকেট।

এনজিওসংস্থার অনুদানে দেওয়া বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার না করে করা হয় বিক্রি, যার নেপথ্যে ফরিদই। ২০২১ সালে করোনা মহামারি চলাকালীন হাসপাতালের বৈদ্যুতিক পাখা, বেড সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বিক্রির অভিযোগ উঠে ফরিদ ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও অভিযোগ আছে, কমিউনিটি ক্লিনিক সহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মীদের কাছ থেকে পদোন্নতি, বদলি সহ নানা অজুহাতে অর্থ আদায় করেন তিনি।

আবুল কাশেম নামে স্থানীয় এক সেবা গ্রহীতা আক্ষেপ করে বলেন, ” ফরিদ ও তার সিন্ডিকেটের  কারণে উখিয়া হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। তার দাপটে আমরা যারা সেবা নিতে যাই তারা অসহায় হয়ে পড়ি। উর্দ্ধতনদের আসকারায় তার সিন্ডিকেট এসব অপকর্ম করছে।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন উখিয়ার সভাপতি সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, ” হাসপাতাল সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মচারীদের কারণে নাগরিক এই সেবাঘরে জনগণের দুর্ভোগ মেনে নেওয়া যায় না। যারা জনতার হক নষ্ট করে নিজেদের সম্পদশালী করছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। ”

অধীনস্থ কর্মচারীর অনিয়ম দুর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রঞ্জন বড়ুয়া রাজন বলেন, ” লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করা হবে। প্রমাণ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে যেই হোক দুর্নীতি অনিয়মে জড়িত থাকলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। ”

অভিযুক্ত ফরিদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে “পরে কথা বলব” বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি, পরে তার কোন বক্তব্য আর পাওয়া যায়নি।