৩ সাক্ষীর জবানবন্দি: মিতু হত্যায় নাটকীয় মোড়

অনলাইন ডেস্ক •


সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার পর পরই বাবুল আক্তারের বন্ধু সায়ফুল ও আত্মীয় কাজী আল মামুনের সাথে মুঠোফোনে দফায় দফায় কথা বলেন মিতু হত্যায় অভিযুক্ত অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম সিকদার মুসা।

সে সময় তাদের মাঝে কি কথা হয়েছিলো, তা উঠে এসেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে। ঘটনার পাঁচ বছরের মাথায় সায়ফুল আর মামুনের দেয়া জবানবন্দিতে নাটকীয় মোড় ঘুরে চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলার। দু’জনের দেয়া সাক্ষ্যের ভিত্তিতে স্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে।

সায়ফুল জানিয়েছে, তার কর্মচারী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন ইরাদের মাধ্যমে তিনি টাকা বিকাশ করেছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, সায়ফুল আর মামুনের মাধ্যমে মুছার কাছে বাবুল আক্তার স্ত্রী হত্যার চুক্তির টাকা লেনদেন করেন। দু’জনে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বিস্তারিত স্বীকার করেছেন।

সায়ফুলের কর্মচারী ইরাদও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। তদন্তে উঠে এসেছে মিতু হত্যার পর পরই (৫ জুন ২০১৬) সকাল ৮টা ৪৯ মিনিটে কামরুল ইসলাম মুসা তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর থেকে বাবুল আক্তারের বন্ধু সায়ফুল হককে ফোন করে ৯৬ সেকেন্ড কথা বলেন। পরের দিন (৬ জুন ২০১৬) বেলা ২টা ৫১ মিনিটে সায়ফুল তার মুঠোফোন থেকে মুসার সাথে কথা বলেন ১৮ সেকেন্ড। ঘটনার পাঁচদিন পর (১০ জুন ২০১৬) বেলা ৫টা ৪৫ মিনিটে সায়ফুল তার মুঠোফোন থেকে মুসার আত্মীয় কাজী আল মামুনের সাথে কথা বলেন ৬৮ সেকেন্ড। ঘটনার দিন মুসা ও পরের দিন ৫টা ২৬ মিনিটে মুসা তার আত্মীয় নড়াইলের কাজী আল মামুনের মুঠোফোনে ফোন করে কথা বলেন ৭৮ সেকেন্ড।

ইরাদের জবানবন্দি : গতকাল মঙ্গলবার আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মোখলেছুর রহমান ইরাদ বলেন, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি সায়ফুলের অফিসে চাকরি করেছেন। বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুর নামে সেখানে শেয়ার ছিল। বাবুল আক্তারের স্ত্রী মারা যাবার দুই তিন দিন পর সায়ফুল তাকে ৩ লাখ টাকা দিয়ে বলেন, বাবুল আক্তারের বোনের বাসায় গিয়ে টাকাগুলো দিয়ে আসতে। তার কথা মতো বোনের বাসায় টাকাগুলো দিয়ে আসি।

২০১৬ সালের ১১ জুন সায়ফুলের কথা মতো টাকাগুলো ফের নিয়ে এসে বাবুল আক্তার তাকে দুই তিনটি বিকাশ নম্বর দেন। ওই নামগুলোর মাধ্যে মামুন, ওয়াসিম আনোয়ারের নাম ছিল। পরে ৩ লাখ টাকা সেই সব বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে দেন ইরাদ। ইরাদ পাবনার ইশ্বরদী থানার খোন্দকার মো. রফিকুর রহমানের ছেলে। তিনি বর্তমানে আবুল খায়ের কোম্পানির শেরপুর সেলস অফিসার হিসাবে কর্মরত রয়েছে।

মামুনের জবানবন্দি : মামুনের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া থানার খলিসাখালীতে। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মামুন জানিয়েছে, তার পুরো নাম কাজী আল মামুন। থাকেন নড়াইলে। সেখানে নাসিম টিউটোরিয়াল নামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। পাশাপাশি দৈনিক বাংলাদেশের আলো নামে একটি পত্রিকায় স্থানীয় প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন। মিতু হত্যায় অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম সিকদার মুসা তার সাবেক স্ত্রীর খালু। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে মুসা সপরিবারে নড়াইলে বেড়াতে গিয়েছিলো। সেই সময় তার সাথে মামুনের পরিচয় হয়। আত্মীয়তার সুবাদে মাঝে মাঝে মুসার সাথে কথা হতো।

জবানবন্দিতে মামুন জানান, ২০১৬ সালের শুরুর দিকে হঠাৎ একদিন মুসা ফোন দিয়ে মামুনের কাছে বিকাশ নম্বর আছে কিনা জানতে চান। বিকাশ নম্বর আছে এমনটি জানিয়ে কারণ জানতে চাইলে মুসা বলেন, এসপি স্যারের এক লোক কিছু টাকা পাঠাবে, টাকাগুলো যেন ক্যাশ করে রাখা হয়। মুছা বলেন, তার পরিচিত ওয়াসিম অথবা নুর নামে কোন ফোন দিয়ে বিকাশ নম্বর দিলে যাতে টাকাগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয়।

সায়ফুলের জবানবন্দি : মিতু হত্যায় টাকা লেনদেনের আরেকজন গুরুত্বপুর্ণ সাক্ষী সায়ফুল হক। সায়ফুল ঝিনাইদহের কোলা খন্দকার পাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে সায়ফুল বলেন, আমি ঢাকার মিরপুরে থাকি। সেখানে প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং নামে আমার প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা আছে। সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সাথে আমার পরিচয় ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন থেকে তার সাথে আমার পরিচয়। আমরা দু’জনে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি আমার ব্যবসাতে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন যা মিতু ভাবীর নামে জমা হয়েছিল। ২০১৬ সালের জুন মাসের ৫ অথবা ৬ তারিখ আমার কাছে একটি ফোন কল আসে। সম্ভব মুসা নামের ব্যক্তি হবে। সে ফোন করে জানতে চেয়েছিলো আমি টাকা পাঠিয়েছি কিনা। সায়ফুল জবানবন্দিতে বলেন, এ ঘটনার দুই-তিন দিন পর বাবুল আক্তার আমার সাথে সরাসরি দেখা করে বলছিলো- তার কিছু নগদ টাকার প্রয়োজন। তখন তিনি আমাকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিলেন এ নম্বরে যোগাযোগ করে ব্যবসায় তার বিনিয়োগের অংশ হতে ৩ লাখ পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। আমি আমার স্টাফ ইরাদের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলাম।