৮ বছর পর সেন্টমার্টিনে দেখা মিলল মূল্যবান সামুদ্রিক শৈবালের

বিশেষ প্রতিবেদক •

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে আট বছর পর আবার মূল্যবান সামুদ্রিক শৈবাল দেখা গেছে। গত দুই দিন থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে এসব শৈবাল পাড়ে আসছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন শুভ। তিনি জানান, দুই দিন ধরে হঠাৎ সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে এসব শৈবাল পাড়ে আসছে।

জানা গেছে, সমুদ্রের অগভীর অঞ্চলে শিকড়, ডালপালা ও পাতাবিহীন উদ্ভিদ জন্মায় যা সামুদ্রিক শৈবাল নামে পরিচিত। এরা সাধারণত পাথর, বালি, পরিত্যক্ত জাল, খোলস বা অন্যান্য শক্ত অবকাঠামোর ওপর জন্মায়। লাল, বাদামি এবং সবুজ তিন ধরনের সামুদ্রিক শৈবাল রয়েছে। বাদামি এবং সবুজ সামুদ্রিক শৈবাল সাধারণত খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর লাল শৈবাল হাইড্রোকলয়েড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।

স্থানীয় জেলে কামাল উদ্দিন জানান, শৈবাল স্থানীয়ভাবে ‘হেজালা’ নামে পরিচিত। সেন্ট মার্টিনে হঠাৎ এত শৈবাল ভেসে আসতে দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এ রকম শৈবাল পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখেছিলাম ৮ বছর আগে। কিন্তু হঠাৎ শৈবাল ভেসে আসা একটি সুখবরের ইঙ্গিত।

সেন্ট মার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কর জানান, উপকূলে লাল, বাদামি ও সবুজ—তিন ধরনের সামুদ্রিক শৈবাল জন্মে। বাদামি এবং সবুজ শৈবাল খাবার হিসেবে এবং বাদামি ও লাল হাইড্রোকলয়েড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। শৈবাল যে উপাদেয় খাদ্য তা সেন্ট মার্টিনের অনেকের কাছে ছিল অজানা।

কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ড. শফিকুল রহমান জানান, এশিয়ার দেশগুলো শৈবাল চাষ করে আসলেও সামুদ্রিক শৈবালের বিষয়ে আগে আমাদের অভিজ্ঞতা বা গবেষণা ছিল না। বাংলাদেশ মৎস্য বিভাগ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ২০১০ সাল থেকে শৈবাল নিয়ে কাজ করছে।

২০১৬ সাল থেকে ১০ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালের ওপর গবেষণা শুরু করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল। বর্তমানে শৈবালের উৎপাদন, কৌশল, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্যবহারের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ সবজির পাশাপাশি কসমেটিকসহ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে শৈবাল। শৈবালে প্রচুর আয়োডিন রয়েছে, যা লবণের বিকল্প হতে পারে।

আর এতে দুধের চেয়েও ১০ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা শরীরে সহজপাচ্য। এগুলো পরিত্যক্ত অবস্থাতে না রেখে সংরক্ষণ করলে সেন্ট মার্টিনের মানুষ অর্থনেতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।