কক্সবাজারে হঠাৎ মেরিন ড্রাইভ বন্ধে ভোগান্তি

বিশেষ প্রতিবেদক •

সড়ক সংস্কারের কারণে আজ সোমবার সকাল থেকে কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এতে সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসা হাজার হাজার পর্যটক, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিরও কর্মকর্তা-স্বেচ্ছাসেবীসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শহরের কলাতলী সড়কের সংস্কারকাজ শুরু করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দুদিন এ সড়কের সংস্কারকাজ চলবে। এ সড়কে দুদিন যাতায়াত বন্ধ রাখার বিষয়ে শহরের মাইকিং করা হয়েছিল, স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছিল।

পর্যটক, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের মেরিন ড্রাইভের বিকল্প হিসেবে টেকনাফ-কক্সবাজার আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দুদিন মেরিন ড্রাইভ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়া লোকজনের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন মেয়র।

সোমবার বিকেলে কলাতলী সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, হাঙর ভাস্কর্য মোড় থেকে কলাতলী সড়কটির প্রবেশমুখ বন্ধ করে সেখানে ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে। কলাতলীর এই সড়ক ছাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কে ওঠার বিকল্প ব্যবস্থা নেই।

সৈকত ভ্রমণে আসা শত শত পর্যটক যানবাহন নিয়ে মেরিন ড্রাইভের পর্যটনপল্লি দরিয়ানগর, পাহাড়ি ঝরনার হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত ইনানী, পাটোয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে যেতে পারছেন না।

এ সড়কে ৪০টির বেশি হোটেল ও ৫০টির বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে। এসবের বেচাবিক্রিও অনেকটা বন্ধ। পূর্বঘোষণা ছাড়া কলাতলী সড়কে সংস্কারকাজ শুরু এবং মেরিন ড্রাইভ বন্ধ হওয়ায় অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, গত কয়েক দিনে সৈকত ভ্রমণে আসছেন লাখো পর্যটক। উল্লেখযোগ্য পর্যটক মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করেন। হঠাৎ করে কলাতলী সড়ক বন্ধ হওয়ায় পর্যটকসহ সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। সড়কটি বন্ধ হওয়ায় শতাধিক হোটেল রিসোর্ট, রেস্তোরাঁর বেচাবিক্রি কমে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, মেরিন ড্রাইভ সড়কের কলাতলী সাবমেরিন কেব্‌ল ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে দক্ষিণ দিকে বেলি হ্যাচারি পর্যন্ত চার কিলেমিটার মেরিন ড্রাইভ ১৯৯১ সালের জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়। এখন পর্যন্ত সেটির সংস্কার হয়নি। লোকজন মেরিন ড্রাইভে যাতায়াতের বিকল্প হিসেবে এত দিন কলাতলী সড়কটি ব্যবহার করে আসছিলেন। কক্সবাজার পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে ওই সড়কের সংস্কারকাজ শুরু করে।

১৯৯১-৯২ সালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণকাজ শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮৪ কিলোমিটার সড়কটি ২০১৭ সালের ৬ মে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকে মেরিন ড্রাইভের গুরুত্ব বেড়ে যায়। সড়কের পশ্চিম পাশে বঙ্গোপসাগর, আর পূর্ব পাশে পাহাড়সারি। যানবাহন নিয়ে চলাচলের সময় সড়কের দুই পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষের মনকে সতেজ করে তোলে।

রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক দম্পতি সায়েম রহমান ও শিউলী চৌধুরী বলেন, সমুদ্রসৈকত দেখার পর বিকেলে মেরিন ড্রাইভ ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নানাভাবে চেষ্টা করেও সে সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে গেল।