উখিয়ায় বিকাশ এজেন্টে হুন্ডির ব্যবসা : কোটি টাকার রেমিটেন্স হারাচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক – রবি নেটওয়ার্ক ভিত্তিক বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে মানি লন্ডারিং ব্যবসা চলছে। সরকার গ্রামিন অবকাটামো উন্নয়নের পাশাপাশি জনস্বার্থে মানুষের দ্বারগোড়ায় সেবা পৌছে দিতে নেটওয়ার্ক কোম্পানী রবি’কে বিকাশ এজেন্ট নামে টাকা লেনদেনের প্রথা চালু করছে কিন্তু তা বর্তমানে হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকারণে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা এদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়ার পর হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বিকাশ এজেন্টের আদলে এই অপতৎপরতায় চলছে। উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক হুন্ডি বা বিকাশ এজেন্ট। যে সব এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসীর পাঠানো টাকাসহ ইয়াবা বিক্রির টাকাও লেনদেন হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকিং প্রতিষ্টান গুলোতে বৈদেশিক রেমিটেন্স কমে হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা।

সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, বিকাশ এজেন্ট সরকারের আর্থিক প্রতিষ্টান হিসেবে প্রথা চালু করায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, বঞ্চিত হয়েছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। তারা মনে করেন এসব ব্যবসা বন্ধ করে মানি এক্সেঞ্জের আদলে নিয়মিত ব্যাংকের সাথে লেনদেন রক্ষাকারী প্রতিষ্টান সৃষ্টি করা প্রয়োজন। কোন বাঁধা ছাড়া এভাবে হুন্ডির ব্যবসা চলতে থাকলে দেশের জন্য ক্ষতি হবে, বেড়ে যাবে মানি লন্ডারিংয়ের মত হাজারো ব্যবসায়ী।

সরেজমিনে দেখা যায়, পচিশে আগষ্টের পুর্বে এ উপজেলায় বিকাশ এর ৫-৬টি টাকা লেনদেনের এজেন্ট ছিল। এখন শুধুমাত্র কুতুপালংয়েই শতাধিক বিকাশ এজেন্ট হুন্ডির ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছে। বিকাশই লেনদেন করছে কোটি কোটি টাকা।

শনিবার সকালে কুতুপালং ক্যাম্প বাজার ঘুরে দেখা যায়, একটি দোকানে ৭-৮জন লোক ভীড় করছে। এসময় কেউ ৩০হাজার কেউ বা ৫০ হাজার এবং একজন রোহিঙ্গা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে।

এ টাকা কোথা থেকে এসেছে জানতে চাওয়া হলে ক্যাম্পের বি ব্লকের বাসিন্দা নুরুল্লাহ (৪৫) জানান, তার ২ ছেলে নুর ইসলাম, আলী আকবর মালয়েশিয়া থাকে। তারাই এসব টাকা পাঠিয়েছে। এসময় বিকাশ এজেন্টের সেইলসম্যান রোহিঙ্গা নাগরিক ছৈয়দ আমিন অস্বীকার করে বলেন ওই টাকা তার কাছ থেকে নেয়নি।

পরে স্বীকার করে বলেন, আইন শৃংখলাবাহিনীর লোকজনকে টাকা দিয়ে বিকাশ ও হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রায় শতাধিক বিকাশ ও হুন্ডি ব্যবসায়ী উখিয়ার বিভিন্ন শরনার্থী ক্যাম্পে প্রকাশ্যে দোকান খোলে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করলেও দেখার কেউ নেই।

তবে রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর জানান, বিদেশ থেকে সমস্ত টাকা বিকাশ ও হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে, উখিয়া সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মনজুর আলম বলেন, যেখানে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো বিকাশ এজেন্ট গড়ে উঠায় ব্যাংক খাতে সরকারী রেমিটেন্স উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে। তিনি দাবী করে বলেন, বিকাশ সাইনবোর্ডের আড়ালে হুন্ডির টাকাও লেনদেন হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান রবিন বলেন, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকায় সঠিক সময়ে ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালানো হচ্ছে না। তবে তার কাছে কোন বিকাশ থেকে অবৈধ টাকা লেনদেন হচ্ছে মর্মে জানতে পারলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিবেন বলে মতামত ব্যক্ত করেন।