কক্সবাজার-৩ আসনে বিএনপির দুর্গে হানা দিতে চায় আ.লীগ : অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার :আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে বিএনপিতে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও মহাজোটের একক প্রার্থী ঘোষণা ঝুলে রয়েছে। এই দুটি উপজেলা স্বাধীনতা পরবর্তী জামায়াত-বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এবারের নির্বাচনে বিএনপির দুর্গে হানা দিতে চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু অর্ন্তদলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মহাজোটের হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিকবোদ্ধারা।

জানা গেছে, কক্সবাজার-৩ রামু-কক্সবাজার সদর আসনে বিএনপি থেকে সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজলকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে সরব রয়েছে জামায়াত বিএনপি। অনেকটা বিএনপির ঘাঁটি বলেও মন্তব্য অনেকের। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মহাজোটের মনোনীত হিসেবে সাইমুম সরওয়ার কমলকে এমপি করা হয়। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলকে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত করেন চার দলীয় ঐক্য জোট প্রার্থী সাবেক যুবদল নেতা লুৎফুর রহমান কাজল।

এদিকে, এই আসনে বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপিকে সহযোগীতা সহ নানান বিরূপ কর্মকান্ডের অভিযোগ দীর্ঘ ৫ বছর ধরে উঠে আসছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, এমপি কমল নিজের আগের গোচাতে ব্যস্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের কোন উপকারে না আসায় জেলা আওয়ামী লীগ, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগ ও কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাথে তাঁর দুরত্বের সৃষ্টি হয়। এই বিরোধ ও দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ নিয়ে। গত আগষ্ট মাসে জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ এক সভায় কক্সবাজার পৌর সভা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজীবুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে কোন্দল আরো চরমে পৌছেন। শেষতক আওয়ামী লীগ থেকে অন্তত ৩৫ জন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

একটি দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, এই আসনে আওয়ামী লীগের এক প্রার্থী ঘোষণার জন্য ঐক্য মতে পৌছতে না পারায় মাহাজোটের ভোট শরীক দল জাপা থেকে জাপা (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলুকে মনোয়নপত্র দেয়া হয়। তবে এই আসনে মহাজোট থেকেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলকে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও জাপার মনোনীত দুই জনেরই মনোনয়নপত্র বহাল রাখা হয়েছে।

২৭ নভেম্বর মঙ্গবার বিকালে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কক্সবাজার পৌঁছেন সাইমুম সরওয়ার কমল। এমপি কমল সমর্থকরা মোটরসাইকেল শুভাযাত্রা ও গাড়ী বহর যোগে বিকালে কক্সবাজার বিমান বন্দর গেইটে সহ বিভিন্ন স্থানে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয় কমলকে। এছাড়াও জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে সাইমুম সরওয়ার কমলকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয় করার জন্য তিনি কাজ কওে যাবেন। বিএনপির দুর্গখ্যাত এই এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় ইনশে আল্লাহ হবেই।

কক্সবাজার জেলা জাপা সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমান বলেন, দল যাকেই মনোনয়ন দিবেন, দলীয় সিদ্ধান্তে তার পক্ষে কাজ করে যাবো।

কক্সবাজার সদর-রামু আসনে বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিক বার চেষ্টা করেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

রাজনৈতিক বুদ্ধারা মনে করেন, এই আসনে আওয়ামী লীগের ভেতর কোন্দল অব্যাহত থাকলে এবং জাপাকেও একত্রিক করা না গেলে এই আসটি আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে তারা আরো মনে করেন, বিএনপি-জামায়াত এমনিতেই এখানে সরব, তাহলে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতারা।