আত্মসমর্পণ করল সীমান্তে অপরাধে জড়িত ২৯৩ জন

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ নওগাঁর সীমান্তবর্তী পোরশা উপজেলার নীতপুর ইউনিয়নের বালাশহীদ গ্রামের যুবক আমিরুল ইসলাম। অভাবের সংসার। বাবা শারফুদ্দিন কৃষিকাজ করে সংসার চালান। পরিবারের সদস্য সংখ্যা আটজন। আমিরুল পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। নিজেদের জমিজমা নেই। জমি বলতে বাড়িটুকুই সম্বল। বড় সন্তান হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব কিছুটা কাঁধে চেপেছে তার। পড়াশোনা করেননি। কৃষিকাজ করে বাবাকে সহযোগিতা করতেন। সঙ্গ দোষে গত তিন বছর আগে স্বল্প সময়ে বেশি টাকা আয়ের লোভে গরু চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বিয়ে করেছেন বছর খানেক আগে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের সীমানা পার হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে রাখাল হিসেবে গরু আনা-নেয়ার কাজ করতেন। প্রতি জোড়া গরুতে পেতেন ১০ হাজার টাকা।

শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে নওগাঁ ১৬ বিজিবির আয়োজনে নীতপুর ক্যাম্পে সীমান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আত্মসমর্পণ ও আলোর পথে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে এসেছিলেন আমিরুল ইসলাম। নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

যুবক আমিরুল ইসলাম বলেন, সীমান্ত পার হয়ে গরু চোরাইপথে আনা নেয়া করতাম। আমরা ৪/৫ জন ভোর ৫টার দিকে যেতাম এবং সকাল ৭/৮টার দিকে গরু নিয়ে ভারত থেকে ফিরে আসতাম। ভারতের লোকেরা গরু এগিয়ে নিয়ে এসে দেয়। এরপর আমরা নিয়ে আসতাম।বাংলাদেশে গাই-বাছুর ৪০/৫০ হাজার টাকা দাম। আর ভারতে ৩/৪ হাজার টাকা দাম। মহাজনরা এসব গরু বাংলাদেশে ৪০/৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আর আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার করে জোড়া প্রতি পাই ১০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ২০ জোড়া গরু পার করেছি। মাস দুই থেকে আর গরু আনা নেয়া করিনি।

bgb-02.jpg

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো মামলা খাইনি। এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে আত্মসমর্পণের জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। যেহেতু বিজিবি একটা সুযোগ দিচ্ছে এ জন্য এসেছি। এটা করাতে ভালো হয়েছে।

একই গ্রামের এমদাদুল হক বলেন, মাঠে কৃষি কাজ করতাম। দেখতাম এলাকার বেশ কিছু যুবক গরু আনা নেয়া করত। স্বল্প সময়ে তারা বেশ টাকা পেত। এরপর মহাজনদের সঙ্গে পরিচয় হয়। গত ৫ বছর থেকে অবৈধভাবে গরু আনা নেয়া করেছি। প্রতি জোড়া গরুতে ১০/১৫ হাজার টাকা পেতাম। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জোড়া গরু নিয়ে আসছি।

এছাড়াও গরু চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত নীতপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম, আব্দুল কাইয়ুম, আব্দুল মালেকসহ কয়েকজন বলেন, আমরা ভুল করে এতোদিন চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। বিজিবি আমাদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করায় সুবিধা হয়েছে।

নওগাঁ ১৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল একেএম আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজিবির রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ।

এ সময় নওগাঁ ১৬ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর এটিএম আহসান হাবিব, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহরাব হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (সাপাহার সার্কেল) বিনয় কুমার, পোরশা থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান চৌধুরী, নীতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সীমান্তের নীতপুর, হাপানিয়া ও করমুডাঙ্গা এলাকার মাদক ও চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২৯৩ জন আত্মসমর্পণ করেন। পরে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথি বিজিবির রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, আমরা রাত-দিন সীমান্তে পাহারা দিয়ে কাজ করছি। আমার দেশের মানুষ যখন বাহিরে মারা যায় তখন কষ্ট লাগে। আমরা কখনো চাই না সীমান্তে কোনো অঘটন ঘটুক। আমরা অন্যায় ও অপমানের পথ থেকে বেরিয়ে আসতে একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছি।

তিনি বলেন, আমরা সীমান্ত কঠোর নীতি অবলম্বন করেছি। যারা সীমান্তে অপরাধের সঙ্গে জড়িত তারা দেশের টাকা দিয়ে বিষ কিনে যুব সমাজকে ধ্বংস ও পুঙ্গু করছেন। এতে দেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ে। যারা এখনও ভুল বুঝতে পারেননি তারা আলোর পথে ফিরে আসুন।