মেয়র আরিফসহ ক্ষুব্ধ ৪ নেতার পদত্যাগ

ডেস্ক রিপোর্ট • সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটিতে ‘ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের’ স্থান না দেওয়ার অভিযোগ তুলে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ বিএনপির চার কেন্দ্রীয় নেতা। গতকাল রোববার সকালে ঢাকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় গিয়ে তারা দলের কেন্দ্রীয় পদ থেকে পদত্যাগের চিঠি দেন। মহাসচিব বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা কয়েকদিন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে কেন্দ্র থেকে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে পদদ্যাগের সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ চার নেতা। বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য আরিফের সঙ্গে পদত্যাপপত্র দিয়েছেন দলের ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান ও কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী।

গতকাল সকালে তারা মির্জা ফখরুলের বাসায় গিয়ে যুবদলের কমিটি গঠনসহ নানা অভিযোগ সংবলিত তাদের লিখিত অভিযোগপত্র ও পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করলেও একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় সামসুজ্জামান ঢাকায় যাননি।

জানা গেছে, সিলেটের চার নেতার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের খবরে দেশের আরও কয়েকটি জায়গায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা একই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন। সিলেট বিভাগের দু-একটি জেলায়ও পদত্যাগের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সিলেট যুবদলের শতাধিক নেতাকর্মীও পদত্যাগের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। এ ছাড়া তাদের অনুসারী ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকশ’ নেতাকর্মী রয়েছেন এই তালিকায়।

গত শুক্রবার কেন্দ্র থেকে ২৯ সদস্যের সিলেট জেলা এবং ২৭ সদস্যের মহানগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের ঠাঁই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে যুবদলের পদবঞ্চিত নেতারা গণপদত্যাগের প্রস্তুতি নেন। এই সময় মেয়রসহ চার নেতা তাদের নিবৃত্ত করেন। তবে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নিজেরাই দলীয় পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন।

মেয়র আরিফ, রাজ্জাক ও শাহরিয়ার গতকাল সকালে মির্জা ফখরুলের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে লিখিত অভিযোগসহ পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন। এ সময় মহাসচিব তাদের কয়েকদিন সময় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় যুবদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যারা যুবদলের ব্যানারে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, তাদের কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি। এই বিষয়সহ সার্বিক বিষয়গুলো লিখিতভাবে মহাসচিবকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় চারজন পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। তিনি বলেন, দলের জন্য যারা জেল-জুলুম স্বীকার করেছে, তারা পদ-পদবি না পেলেও তাদেরও পদের দরকার নেই।

বিএনপি মহাসচিবের অনুরোধে কয়েকদিন সময় দিলেও তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফ। তিনি বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে আমরা কয়েকদিন অপেক্ষা করব। এর মধ্যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।’

অভিযোগ রয়েছে, সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটিতে থাকা নেতাদের সিংহভাগই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের অনুসারী। গত বছর গঠিত ছাত্রদলের কমিটিতেও খন্দকার মুক্তাদিরের অনুসারীদের আধিক্য ছিল। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির এই নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। যার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে যুবদলের কমিটি ঘোষণার পর।