উখিয়ায় মিশ্র প্রজাতির বনায়নের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাটের অভিযোগ

ফারুক আহমদ, উখিয়া •


উখিয়া ও ইনানী রেঞ্জে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় ৯ শত ৪ হেক্টর বনায়নের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাটের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে । উপরের কর্তাদের কে ম্যানেজ করার নামে দায়িত্বরত রেঞ্জ কর্মকর্তা গণ মোট বরাদ্দের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ টাকা পকেটস্থ করে রেখে দেয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

দায়িত্বশীলের মতে এবারে বনায়ন বাস্তবাাায়ন করতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ প্রদান করেছেন। সচেতন নাগরিক সমাজ এ বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে চলতি অর্থবছরে ইনানী রেঞ্জের অধীনে ছোয়ান খালী, জালিয়া পালং , ইনানী ও রাজা পালং বন বিটের আওতায় সর্ব মোট ৫ শত ৫০ হেক্টর বন ভূমিতে বনায়ন হচ্ছে।
তৎমধ্যে ৩৮০ হেক্টর দীর্ঘমেয়াদি দ্রুতবর্ধনশীল প্রজাতির ও স্বল্পমেয়াদী দ্রুত বর্ধনশীল ১৮০ হেক্টর বনভূমিতে বানান হয়েছে। ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইইব্রাহিম হোসেন জানান সৌন্দর্য বর্ধন করার জন্য সমুদ্র চরে ৩০ হেক্টর ঝাউ বাগান সৃজন করা হয় ।

অপরদিকে উখিয়া রেঞ্জের আওতাধীন থাইং খালী, উখিয়া সদর, ওয়ালা পালং, দোছড়ি ও ভালুকিয়া পালং বন বিটে ৩৫৪ হেক্টর বন ভূমিতে বনায়ন হয়েছে। তৎ মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল ২৮০ হেক্টর ও ধীর বর্ধনশীল ৭৪ হেক্টর। রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী তারিফুল ইসলাম বলেন হলদিয়াপালং বনবিটে ৪ হেক্টর বনায়ন করা হয়েছে যা কখনো কর্তন করা হবে না। এটি গাছের প্রজনন বংশ বিস্তার সহ পশু পাখিদের অভয়ারণ্য হবে।
এদিকে বন অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্প নামক মেগা প্রকল্প টি বাস্তবায়ন করেছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ।

বনবিভাগের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ৯ শত ৪ হেক্টর বনায়নে প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপণের কথা রয়েছে। তন্মধ্যে চিকরাশি, গামার আকাশমনি, চাতিয়া, বকাইন, করই, শিমুল, বহেরা, অর্জুন ইত্যাদি।

বনায়নের জন্য নার্সারী স্থাপন, উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ, চারা উৎপাদন, চারা রোপণ, সার প্রয়োগ খুটি স্থাপন সহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
অভিযোগে প্রকাশ ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ইনানী রেঞ্জের জালিয়া পালং রাজাপালং, ইনানী ও ছোয়ানখালী বনবিটে সুফল প্রকল্পের বনায়ন সৃজন করা হয়েছে। অনেক হেডম্যান ও ভিলেজার জানান, ৬ ফুট অন্তর দূরত্ব করে চারা রোপণের কথা থাকলেও একেকটি চারা দূরত্ব করা হয়েছে ১০ ফুট থেকে ১২ ফুট। চারা রোপণের পূর্বে গোবর সার ও রাসায়নিক সার দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এমনকি প্রতিটি চারার সাথে ছোট ছোট খুটি দেওয়ার কথা থাকলেও কোথাও একটি খুঁটি দেওয়া হয়নি।

অপরদিকে উখিয়া রেঞ্জের ৫ টি বন বিটে অনুরূপ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বনায়ন যেনতেনভাবে চালিয়ে গেছে। বিশেষ করে ওয়ালা পালং বনবিটে সুফল বনায়ন কার্যক্রম নাজুক অবস্থা।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে দ্রুত বর্ধনশীল বনায়নে প্রতি হেক্টরে ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয় ৩২ হাজার টাকা করে আর দীর্ঘ মেয়াদী বনায়নে প্রতি হেক্টরে ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার টাকা। এছাড়াও ৯ শত ৪ হেক্টর বনায়নে উইডিং বা জংগল পরিস্কার করার জন বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় ৩১ লাখ টাকা।

পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন সুফল প্রকল্পের বনায়নে জৈব সার, রাসায়নিক সার ও খুটি ক্রয়ের বরাদ্দ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে। শুধু তাই নই ৯ শত ৪ হেক্টর বনায়ন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে পরিমাপ করলে বনায়নের পরিমাণ আরো কম হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বনবিটের কর্মকর্তারা জানান রেঞ্জ কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন ও উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী তারিকুল ইসলাম মোট বরাদ্দের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ টাকা উত্তোলনের সময় রেখে দেন। অবশিষ্ট ৬৫ টাকা দিয়ে বনায়নের কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে।
বনায়নের জড়িত সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানান বাগান পরিষ্কার বা উডিংয়ের কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। অথচ এ খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায় বন অধিদপ্তরের সুফল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির সরেজমিন তদন্ত আসলেও নামেমাত্র লোক দেখানো রাস্তার ধারে নতুন বনায়ন দেখে চলে যান। ফলে বাস্তবে বনায়নের কি অবস্থা তার চিত্র ধামাচাপা পড়ে যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন, বলেন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এবং সিডিউল মোতাবেক সুফল প্রকল্পের বনায়ন সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী ২০২১ সালের অর্থবছরের জন্য আরো ৩ শত হেক্টর বানানোর জন্য নার্সারি স্থাপন কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি অনিয়ম দুর্নীতি ও ৩৫ শতাংশ টাকা কর্তন করে রেখে দেওয়ার বিষয়টি সত্য নই দাবি করে বলেন করোনা চলাকালীন সময়ে বনায়নের কাজ সম্পন্ন করতে পারাটা অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। এছাড়াও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক পরিদর্শনে এসে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যোগাযোগ করা হলে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী তারিকুল ইসলাম সুফল কর্মসূচির বনায়ন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেন।

স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পে বনায়নের নামে রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিট কর্মকর্তা কর্তৃক লক্ষ লক্ষ টাকার অনিয়ম দুর্নীতির ও লুটপাটের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।