এ গ্রামে জীবনে একবার হলেও যাওয়া উচিত

পুরো গ্রামটাই যেন কম্পিউটার স্ক্রীনে সাঁটানো ওয়েলপেপার! যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু চোখে পড়ে তাদের হাজার হাজার সবুজ স্তর। এছাড়া সবুজ ধানক্ষেত, পাল বেঁধে যাওয়া মহিষ, শাক-সবজির বাগান, সেচের খাল এবং পুকুরের কোমল গোলাপি পদ্ম ফুলসহ আরো কত কিছুর দেখা মেলে। জীবনে অন্তত একবার হলেও যে কারো ঘুরে আসা উচিত এই গ্রামে।

গ্রামটির নাম ইয়াংসু। বেইজিং থেকে ২ হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে, লী নদীর তীরে অবস্থিত। এখানেই দেখা মিলে চীনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় দৃশ্যগুলো! এই গ্রামের কুলিদের থেকে তাদের টুপি এবং ঝুড়ি ধার করে নিলাম আমরা। তাদের কাছ থেকেই কিছুটা শিখে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চা পাতা তুলতে শুরু করলাম, একেবারেই ছোট পাতাগুলো। এখানে এসে কিছু বিষয় প্রথমবারের মতো শিখেছি। যেমন, গ্রিন টি, হোয়াইট টি (হালকা গাঁজানো), উলঙ টি (৫০% গাঁজানো) এবং ব্ল্যাক টি (পুরোপুরিভাবে গাঁজানো) এই সবগুলোই যে একই চা গাছ থেকে আসে।

অনেক বছর আগে একজন ফটোগ্রাফার কোনো একটি কার্স্ট পাহাড়ে ওঠার ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। পাহাড়ের গা বেয়ে সাপের মতো একেঁবেঁকে যাওয়া লী নদীর অনুপম সেই দৃশ্য তিনি ক্যামেরাবন্দী করতে পেরেছিলেন, যেটি একটি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। এ ছবির জন্য তিনি হয়ে যান জগদ্বিখ্যাত। এই দৃশ্য অবলোকন করার জন্য তখন থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ ভীড় করতে থাকে। এদিকে যাদের মধ্যে প্রায় ৪৫৬ জন জয় করতে পেরেছেন পাহাড়ের এই চূড়া।

ইয়াংসু শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত রাস্তা হচ্ছে ‘ওয়েস্ট স্ট্রিট’, যেখানে পূর্ব এসে পশ্চিমে মিলেছে। এটা মূলত কাঁকর ছাওয়া প্রাচীন একটি রাস্তা, পথচারীরা যেখান দিয়ে চলাচল করে। তার চারপাশে দেখা যায় অসংখ্য বার, ক্যাফে এবং রেস্টুরেন্ট। যেগুলো প্রায় রাস্তা পর্যন্ত চলে এসেছে। এখানে থরে থরে সাজানো আছে বিভিন্ন দোকানপাট যেখানে চাইনিজ উপহার সামগ্রী, স্থানীয় খাবার বিক্রি হয়।

ওয়েস্ট স্ট্রিট আপনাকে নানা রকম অভিজ্ঞতা দিতে পারলেও আমি মনে করি শহরটির তুলনামূলক কম মার্জিত রাস্তা কিংবা সরু গলিগুলোও ঘুরে দেখা উচিত যেখানে ইয়াংসুর সাধারণ একটি জীবনের গন্ধ পাওয়া যায়।

এন্তেন্না পাহাড়ে যাওয়ার পথে পিপল’স পার্কেও আমি একটু ঢুঁ মেরেছিলাম। কী দারুণ একটি জায়গা! মানুষজন তাদের ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ অপেরা গাইছে এবং বাজাচ্ছে, কেউ বা খেলছে কার্ড। একদল মানুষ আবার স্ট্রিংড এরহু বাজাচ্ছে, আরেকদল ড্রাম। তাদের সবার সামনে একটি স্টেজ ছিল যেখানে দাঁড়িয়ে দুজন মহিলা বিভিন্ন হাস্যরসাত্মক অঙ্গভঙ্গি করে গান গাচ্ছিলেন।

বাঁধানো একটা জায়গায় কিছুক্ষণ বসে থেকে আমি এগুলো দেখছিলাম আর বিনোদিত হচ্ছিলাম দারুণভাবে। পার্কের অন্য কোণায় অনেকগুলো দল ব্যস্ত ছিল তাস দিয়ে জুয়া খেলায়। এরকম তাস আমি অবশ্য এর আগে আর কোথাও দেখিনি। চাইনিজ বৈশিষ্ট্য সম্বলিত লম্বা এবং সরু আকৃতির। তারপর ওয়েস্ট স্ট্রিটের পথ ধরে আমি আরো কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে চারপাশ দেখলাম সেদিন। ভাবলাম এই হচ্ছে চীনের আরেকটি বিশুদ্ধ খণ্ডচিত্র।