কক্সবাজারে ঈদের আগেই চাল পাচ্ছে দেড় লাখ পরিবার

এম. বেদারুল আলম •

পবিত্র ঈদুল ফিতর তথা মাহে রমজানের ঈদ উপলক্ষ্যে জেলায় দেড় লাখ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হচেছ। তবে চাল বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমে যাওয়ার কারণে এ বছর প্রায় ৫০ হাজার পরিবার বাদ পড়েছে। এ ঈদে জেলার ৭১ ইউনিয়নে এবং ৪ পৌরসভায় ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৯৩টি পরিবারের জন্য ১৪০৬ মে.টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন ৪ পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের জন্য প্রদত্ত বরাদ্দ প্রায় সকল ইউনিয়ন পরিষদে এবং পৌরসভায় পৌছে যাচ্ছে এবং জনপ্রতিনিধিগণ বিতরনের জন্য তালিকা প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামি ২৮ এপ্রিলের মধ্যেই সকল দরিদ্রদের কাছে চাল বিতরণ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরে বিশেষ বরাদ্দের আওতায় অসহায় দুঃস্থ জনগোষ্ঠির জন্য ঈদ উপলক্ষ্যে ভিজিএফ কর্মসূচিতে জেলায় সাড়ে ৭ লাখ গরীব প্রান্তিক মানুষের জন্য ১ হাজার ৪শ ০৬ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ।

এতে প্রতি পরিবার ১০ কেজি করে চাল পাচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার ৭১ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের উপকারভোগিদের তালিকা প্রস্তত করে বরাদ্দ দেয়ার সকল প্রস্তুতি গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামি ২৮ এপ্রিল চাল বিতরণের শেষ দিন বলে বরাদ্দপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় উপকারভোগিদের তালিকা প্রনয়নে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয় তার অন্যতম হল-২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ি কার্ড পুনঃবিভাজন করতে হবে তা সংসদ সদস্যদের জানাতে হবে, দুঃস্থ ,অতিদরিদ্র, ব্যক্তি/পরিবারকে এ সহায়তা দিতে হবে, তবে বন্যায় আক্রান্তদের কিংবা অন্যান্য দূর্যোগে পতিতদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, ৭০ শতাংশ মহিলা তালিকাভুক্ত করতে হবে, ভুমিহীন, দিনমজুর, উর্পাজনক্ষম পুরুষবিহীন পরিবার, স্বামী পরিত্যাক্ত, তালাকপ্রাপ্ত, ভিক্ষাবৃত্তির উপর নির্ভরশীল, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, প্রাকৃতিক দূর্যোগে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ , লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে অগ্রাধিকার দিয়ে তালিকাভুক্ত করতে হবে।

উপজেলা ভিত্তিক উপকারভোগির সংখ্যা এবং চাল বরাদ্দের পরিমান হলো – চকরিয়ায় ১৮ ইউনিয়নে ১৮,৩১২ কার্ডের তথা পরিবারের জন্য ১৮৩.১২০ মে.টন। কক্সবাজার সদরের ১০ ইউনিয়নের ১১,৬৬৩ পরিবারের জন্য ১১৬.৩৭০ টন।

কুতুবদিয়ায় ৬ ইউনিয়নের ৬১৩০ পরিবারের জন্য ৬১.৩০০ মে.টন। মহেশখালীর ৮ ইউনিয়নের ১৭,৭৬৫ পরিবারের জন্য ১৭৭.৬৫০ মে.টন। পেকুয়ার ৭ ইউনিয়নের ৭৭৭৮ পরিবারের জন্য ৭৭.৭৮০ মে.টন। রামুর ১১ ইউনিয়নের ১৪,৪৫৫ পরিবারের জন্য ১৪৪.৫৫০ মে.টন। টেকনাফের ৬ ইউনিয়নের ১৮,০৭২ পরিবারের জন্য ১৮০.৭২০ মে.টন। উখিয়ার ৫ ইউনিয়নের ২৮,০৬০ পরিবারের জন্য ২৮০.৬০০ মে.টন চাল । কক্সবাজার পৌরসভার ৪৬২১ পরিবারের জন্য ৪৬.২১০ টন, চকরিয়া পৌরসভার ৪৬২১ পরিবারের জন্য ৪৬.২১০ টন, মহেশখালী পৌরসভার ৪৬২১ পরিবারের জন্য ৪৬.২১০ টন এবং টেকনাফ পৌরসভার ৪৬২১ পরিবারের জন্য ৪৬.২১০ টন।

ভিজিএফ এর চাল বিতরণ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গির আলম জানান, জেলার ৭১ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ৪ পৌরসভার মেয়র বরাবরে সব চাল পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উপজেলার ভিজিএফ কমিটি বৈঠক বসে বরাদ্দ বিষয়ে সিদ্বান্ত নেবেন। তালিকা তৈরীতে যেন স্বজনপ্রীতি করা না হয় সে বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশাকরি প্রকৃত দরিদ্ররা বরাদ্দের চাল পাবে।

চাল বিতরণের প্রস্তুতি বিষয়ে ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় পরিবারে ঈদের আগে হাসি ফোঁটাতে ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। বরাদ্দপত্র হাতে আসা মাত্রই তালিকা প্রণয়নে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে মেম্বারগণকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে নির্দেশ দিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে আশাকরি তা বাস্তবায়ণ শুরু করতে পারব।

জেলা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সমিতির সভাপতি সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের সচিব মোঃ শিহাব উদ্দিন জানান, আগামিকাল সদর উপজেলায় সম্বয় কমিটির মিটিং আছে। মিটিং এ ভিজিএফ বিতরণ বিষয়ে আলোচনা ও নির্দেশনা আসতে পারে। আমরা বরাদ্দ পেলে চাল উত্তোলন করে পরিষদে নিয়ে যাব। সদর ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশ পেলে কার্যক্রম শুরু করবেন বলে সচিব শিহাব উদ্দিন জানান।

সরকার ঈদে দরিদ্রদের মুখে হাসি ফুটাতে উক্ত ভিজিএফ কর্মসূচি চালু করেছে যার সফলতা নির্ভর করছে জনপ্রতিনিধিদের সততার উপর। দরিদ্রদের চাল যেন সঠিক উপকারভোগি পায় সে বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।