কক্সবাজারে জমি দখলে নিতে ভাংচুর-লুটপাট

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কক্সবাজার শহরের কলাতলী বেলী হ্যাচারি সংলগ্ন এলাকায় চিহ্নিত একটি ভূমিদস্যু চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি ওই স্থানে সরকারি জমি, সৈকতের বালিয়াড়ি; চলাচলের রাস্তা দখল করে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন তৈরি করে দখল অব্যাহত রেখেছে।

সম্প্রতি চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে আবুল কালাম আজাদ ও রেজাউল করিম নামের ঢাকায় বসবাস করা দুই ব্যক্তির জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, ভূমিদস্যু চক্রটির তৎপরতা থামাতে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি মালিকরা ওইসব স্থানে বাউন্ডারি দেয়াল কিংবা পাহারা বসিয়েও থামাতে পারেনি তাদের। এই চক্রের মূলোৎপাটন করতে অভিযানের পর অভিযান চালিয়েও তেমন কোন পরিবর্তন আনতে পারছে না কউকসহ স্থানীয় প্রশাসন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঈদের ছুটিতে অফিস আদালত বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কথিত ডাক্তার মিজানুর রহমান, ডাঃ ইব্রাহীম খলিল, কামরুজ্জামান লিমন ও মুহাম্মদ নূরুল কাদেরসহ ৫/৬ জনের একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র ব্যক্তিমালিকাধীন একটি জমি দখলে নিতে রাতের আঁধারে ভাংচুর-লুটপাট চালিয়েছে। ইতিমধ্যে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে জমির বাউন্ডারি দেয়ালও। চক্রটির অপতৎপরতা থামাতে জমি মালিকরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের ধারস্ত হয়েও থামাতে পারছেন না তাদের।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি কলাতলীর বেলী হ্যাচারি সংলগ্ন এলাকায় একটি বিরোধপূর্ণ জমি দখলে নেন চক্রটি। জমিটি দখলের পর অনুমোদনহীন একটি বহুতল ভবণ নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। ভবনের সামনে থাকা আরেকটি জমি দখলে নিতে বাউন্ডারি দেয়াল ভাংচুর করা হয়েছে। সেখানে থাকা অস্থায়ী ঘরটিও রাতের আঁধারে গুটিয়ে দিয়ে যাবতীয় মালামাল লুট করা হয়েছে। মেরিনড্রাইভ সড়ক ঘেঁষে সামনের অংশ কালো ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। সেই জমির পেছনে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে চক্রটি। ঢাকার সাভার এলাকার আবুল কালাম আজাদ ও রাজবাড়ীর এলাকার মোহাম্মদ রেজাউল করিমের ৬ শতক জমির দেয়ালসহ সবকিছু গুটিয়ে দিয়ে সেখানে রাতারাতি সাইন বোর্ড দিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দখলদারের নাম। যেখানে এই দখলটি নিজের মালিকানা বলে দাবি করেছে কথিত ডাক্তার মিজানুর রহমান, ডাঃ ইব্রাহীম খলিল, কামরুজ্জামান লিমন, মুহাম্মদ নূরুল কাদেরসহ চক্রটি।

ভুক্তভোগী জমির মালিক রেজাউল করিম জানান, ৬ শতকের জায়গাটি এক বছর আগে জনৈক হুমায়ুন কবিরের কাছ থেকে তারা দু’জনে ক্রয় করেছেন। চারপাশে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণের পর একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেন তারা। পাহাড়ায় রাখেন একটি পরিবারকে। কিছুদিন ধরে ওই জমিটির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ভূমিদস্যু চক্রটির। গত ঈদের রাতে ভূমিদস্যু চক্রটি একদল ভাড়াটিয়া দাগী সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে ঢাকায় বসবাসকারী রেজাউল করিম ও আবুল কালামের ভোগ দখলে থাকা ৬ শতাংশ জমির উপর অবস্থিত বাউন্ডারি দেয়ালসহ অস্থায়ী ঘরে হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা সবকিছু ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে থাকা লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী বরাত দিয়ে ভুক্তভোগী জমির আরেক মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদের দিন রাতে আনুমানিক ২০-২৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আচমকা আমাদের বাউন্ডিসহ ঘরটি ভাঙতে শুরু করে। এসময় সেখানে পাহাড়ায় থাকা লোকজন বাধা দিতে গেলে তাদের ধাওয়া দেয় সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে জমির সবকিছু গুটিয়ে দিয়ে যাবতীয় মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে এই চক্রটি একটি নিজস্ব বাহিনী তৈরি করে এই দখল অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন সময় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগ উচ্ছেদ অভিযান ও মামলা করলেও তা বন্ধ করা যায়নি। এর মধ্যে বহুতল বভন, সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে তৈরি হচ্ছে অনুমোদনহীন ভবণ। সম্প্রতি নতুন করে আরও একাধিক স্থাপনার চেষ্টা চালাচ্ছেন এই চক্র।

চক্রটির অনুমোদনহীন বহুতল ভবণ নির্মানের পেয়ে কউকের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ঘটনাস্থলে যান। এই সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশেনা দেন তারা। কিন্তু তা অমান্য করে নতুন করে ভবণ নির্মাণ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, রহস্যজনক কারণে প্রকৃত ভূমিদস্যু ও দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিতে পারায় চক্রটি এ ধরনের বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা জানান কলাতলীর একটি শক্তিশালী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট এর পেছনে রয়েছে।

এবিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি রকিবুজ্জামান বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।###