কক্সবাজার থেকে ‘উড়ে’ যাচ্ছে ইয়াবা

ফাইল ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ গত দুই বছর ধরে মাদক নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কঠোর অবস্থানের কারণে ইয়াবার কারবারিরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় তারা বেছে নিয়েছে আকাশ পথকে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে (অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল) রুট হিসেবে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। গত এক বছরে এই বিমানবন্দরে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কাস্টমসের হাতে গ্রেফতার হয়েছে নারীসহ ৭২ জন। আর তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আড়াই লাখ পিস ইয়াবা। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয় বাহকের পাকস্থলী থেকে। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় জড়িত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে ইয়াবা কারবারিদের ঠেকানো একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, তারা ইয়াবা বহন করছে পাকস্থলীতে করে। সহজে এদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। যাদের ধরা হয়েছে তাদের সিংগভাগই ধরা পড়েছে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে। আর সন্দেভাজনের আটকের পর তাদের এক্সরে মেশিনে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়।

বিমানবন্দরে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, বিমানবন্দরে স্ক্যানার দিয়ে সহজেই ধরা পড়ে স্বর্ণ। কিন্তু মাদক ধরার ক্ষেত্রে স্ক্যানার কাজে আসছে না। কারণ ইয়াবা বা অন্য মাদক মেটাল জাতীয় পদার্থ নয়। ইয়াবা ধরার ক্ষেত্রে এক্সরে কার্যকরী।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ইয়াবা কারবারিদের রুখতে (শনাক্তে) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দরের ভেতরে শিগগিরই এক্সরে মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মেশিনটি স্থাপন করা হলে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক শনাক্তকরণ সহজ হবে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা সম্মতিও দিয়েছেন।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন শিমুল বলেন, বিমানবন্দরে দেহের ভেতরে বহন করা মাদক শনাক্তের প্রযুক্তি না থাকায় এ পথকে বেছে নিয়েছে মাদক চক্র। শুরুতে যাত্রী বেশে ব্যাগে লুকিয়ে আনলেও, এখন শরীরের নানা অঙ্গে বা পেটের ভেতরেই মাদক বহন করছে পাচারকারিরা, যা স্ক্যানারে ধরা পড়ে না। কারণ, মাদক আসলে মেটাল না। মাদক ধরতে প্রয়োজন এক্সরে মেশিন, যেটি বিমানবন্দরে নেই। তবে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ধরা না পড়লেও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমর্ড পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য কাজে লাগিয়ে অপরাধীকে শনাক্ত করা হচ্ছে।

আলমগীর বলেন, ইয়াবা কারবারিদের ঠেকাতে বিশেষ করে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এক্সরে মেশিন বসানো খুবই জরুরি। তবে সবাইকে (যাত্রী) তো আর এক্সরে মেশিনে স্ক্যান করানো যাবে না। যাদের গতিবিধি সন্দেহজনক তাদের স্ক্যান করলেই ইয়াবা কারবারিদের দৌরাত্ম্য কমে যাকে বলে তিনি মনে করেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ঢাকা মেট্রো-উত্তর অঞ্চল) সহকারী পরিচালক খুরশিদ আলম বলেন, সত্যি উদ্বেগের বিষয় যে ইয়াবা আসছে আকাশপথে। তারা ইয়াবা বহনের জন্য ব্যবহার করছে বিভিন্ন পেশার মানুষকে। বিমানবন্দরে মাদক ধরার জন্য প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই মাদক ধরার মেশিন ক্রয় করা হচ্ছে।

যেভাবে পাকস্থলীতে ইয়াবা আনা হয়

ইয়াবা বহনকারী চক্র টাকার বিনিময়ে ৫০০ থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত ইয়াবা প্যাকেট করে পেটের ভেতর লুকিয়ে বিমানযোগে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পেটে থাকলেও যাতে ইয়াবা গলে না যায় তার জন্য বহনকারীকে বিশেষ ধরনের ওষুধ খাওয়ানো হয়। কোনো কোনো চালানের প্যাকেটে ৫০টি ট্যাবলেট থাকে। আবার পায়ু পথে একধরনের ছোটো পাইপ ব্যবহার করে তার ভেতরে ইয়াবার প্যাকেট ঢুকিয়ে বিমানযোগে ঢাকায় আনা হয়।