গরমে অসুস্থতা থেকে বাঁচতে যা জানা জরুরি

বৈশাখ মাস শুরু হতে না হতেই বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা। গতকাল বুধবার দুপুর দুটায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও আর্দ্রতার কারণে বাস্তবে গরম ছিল আরো বেশি। গত মঙ্গলবার ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রির বেশি। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ১৮ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কী করতে হবে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, গরমের সময় শুধুমাত্র সতর্ক থেকে অনেক বিপদ এড়ানো যেতে পারে। এ জন্য তিনি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
সূর্যের আলো এড়িয়ে চলা : সকাল ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রোদের তীব্রতা বেশি থাকে। এ সময় জরুরি কাজ না থাকলে বাইরে বের না হওয়া ভালো।
ছাতা ব্যবহার : বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করা, যাতে সরাসরি রোদের মধ্যে থাকতে না হয়। এ সময় চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপও ব্যবহার করা যেতে পারে। ডা. বেনজীর বলেন, যারা মাঠেঘাটে কাজ করেন, তারা মাথায় ‘মাথাল’ ব্যবহার করতে পারবেন, যা তাদের রোদ থেকে রক্ষা করবে।
বেশি করে পানি পান করা : গরমে ঘাম হয়ে শরীর থেকে প্রচুর পরিষ্কার পানি বের হয়ে যায়। তখন ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স তৈরি হতে পারে। এ কারণে এ সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে। লবণ মিশিয়ে পানি পান করতে পারলে আরো ভালো। ফলের জুস খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। তবে এ জাতীয় জুস খাওয়ার সময় দেখতে হবে সেটি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে তৈরি কি না। খোলা, পথের পাশের দূষিত পানি বা শরবত এড়িয়ে চলতে হবে।
সুতির কাপড় পরতে হবে : গরমের এই সময়টায় জিন্স বা মোটা কাপড় না পরে সুতির নরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। এ ধরনের কাপড়ে অতিরিক্ত ঘাম হবে না এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে। গরমের সময় কালো বা গাঢ় রঙের কাপড় এড়িয়ে সাদা বা হালকা রঙের কাপড় পরা ভালো। কারণ হালকা কাপড় তাপ শোষণ করে কম।
সঠিক জুতা নির্বাচন : গরমের সময় খোলামেলা জুতা পরা উচিত, যাতে পায়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। কাপড় বা সিনথেটিকে বাদ দিয়ে চামড়ার জুতা হলে ভালো। কারণ এতে গরম কম লাগে। সম্ভব হলে মোজা এড়িয়ে চলা যেতে পারে।
ভারী ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন : এ জাতীয় খাবার হজম হতে সময় বেশি লাগে। ফলে সেটি শরীরের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে এবং শরীরের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য সেটি আরো বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। খাবারের মেন্যু থেকে গরমের সময় তেলযুক্ত খাবার, মাংস, বিরিয়ানি, ফাস্টফুড ইত্যাদি বাদ দেওয়া যেতে পারে। বরং শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খাওয়া যেতে পারে।
পুরনো বা বাসি খাবার না খাওয়া : গরমে খাবার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাসি খাবার বা আগের দিন রান্না করা খাওয়ার খাওয়ার আগে দেখে নিতে হবে যে, সেটি নষ্ট কি না। এ জাতীয় খাবার খেলে ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানাসহ পেটের অসুখ হতে পারে।
ঘরে পানি ভর্তি বালতি রাখা : এসি না থাকলেও সমস্যা নেই। ঘরের ভেতর ফ্যানের নিচে একটি পানিভর্তি বালতি রাখুন, যা ঘরকে খানিকটা ঠান্ডা করে তুলবে।
হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা : প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। ফলে মাংসপেশি ব্যথা, দুর্বল লাগা ও প্রচণ্ড পিপাসা হওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে প্রেশার পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিদিন অবশ্যই গোসল : গরমের সময় প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করতে হবে, যা শরীর ঠান্ডা রাখবে। দিনে একাধিকবার হাত, মুখ, পায়ে পানি দিয়ে ধুতে পারলে ভালো। বাইরে বের হলে একটি রুমাল ভিজিয়ে সঙ্গে রাখতে হবে, যা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর মুখ মুছে নেওয়া যাবে।