ছাত্রলীগ কি কোন সংগঠন, নাকি অপরাধীর নাম?

  • আমানত উল্লাহ সাকিব ◑

সমগ্র বিশ্বের এখন সব চেয়ে ভয়ংকর ডিজাস্টারের নাম করোনা ভাইরাস। চীনের ওহান প্রদেশে জন্ম নিয়ে শক্তিশালী চীনদেশকে লন্ডভন্ড করে ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়া জুড়ে।

বিশ্বের পরাশক্তিধর আমেরিকা, রাশিয়া, বৃটেন, ইতালি সহ পৃথিবীর বেশিরভাগ রাষ্ট্রে করোনার করুন পরিনতি এখন চলমান। দক্ষিন এশিয়ার জনবহুল দেশ বাংলাদেশে ইতালি ফেরত এক প্রবাসীর মাধ্যমে করোনা রোগটি সর্বপ্রথম সনাক্ত হয়।

বিশ্বের পরাশক্তি দেশে সমুহে করোনা ভাইরাসের তান্ডবলীলা দেখে এবং এই করোনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পেরে বাংলাদেশ সরকার পুরো বাংলাদেশ এক প্রকার লকডাউন করে দিয়েছে। দেশের মানুষও সরকারের নির্দেশনা মনে নিজেদের জীবন বাচাঁতে করোনার ভয়ে প্রায় একসাপ্তাহ ধরে গৃহ বন্ধি হয়ে আছে।

উন্নত দেশগুলো এই দুর্যোগপূর্ন সময়ে দেশের সকল মানুষের জন্য খাদ্যের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করলেও আমাদের মত সম্পদের অপ্রতুল্য দেশে সরকারের পক্ষে সেটা করা সম্ভব হয়নি।

মানুষ যাতে অবাধ চলাচল করতে না পারে, সেই জন্য সরকার প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশকে মাঠে নামিয়েছে। যাতে করে জনগণ একত্রিত হয়ে এই ছুঁয়াছে করোনা ভাইরাস ছড়াতে না পারে।

এখন কথা হলো বাংলাদেশের প্রায় ৫ কোটির উর্ধে মানুষ শ্রমিক। যারা কাজ করলেই পরিবার সন্তানদের খাবারের ব্যবস্থা হয়। আর ৩ কোটি মত মানুষ আছে যারা দিনে এনে দিনে খাই। এমন একটা দেশে গত একসাপ্তাহ ধরে লকডাউন চলছে এবং আরো একসপ্তাহ চলবে।এই সময়ে এই দিনমজুর মানুষ গুলো কি খাচ্ছে সেই চিন্তা কি কেউ করেছে??

করোনা যেহেতু ছুঁয়াছে রোগ, এই রোগ থেকে বাচাঁর জন্য নিয়মত মাস্ক পরিধান, হ্যান্ডসেনিটাইজার এবং সাবান দিয়ে হাত দৌত করা খুবি জরুরি। যে গুলোর উপজেলা পর্যায়ের শহর গুলোতে খুবি সংকট। আর জেলা ও বিভাগীয় শহর গুলোতে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট করে রেখেছে।

এখন এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সরকার দিন মজুর গরিব মানুষেরদের অন্তত দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য একটা বাজেটা দিয়েছে। যেটা এই বৃহৎ জনগোষ্ঠির জন্য খুবি অপ্রতুল্য। তার মধ্যে এই বাজেটের টাকাটা নিশ্চিত ভাবে তাদের পর্যন্ত পৌছায় কি না তাও অনিশ্চিত।তাই সরকারের পক্ষে এই বিশাল জনগুষ্টির খাদ্য এবং অন্যন্য গুরত্বপূর্ণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করা সম্ভব হবেনা।

দেশের দুর্যোগপূর্ন সময়ে কিছু রাজনৈতিক সংগঠন, সেচ্ছাসেবী সংগঠন, সরকারের পাশাপাশি দরিদ্র দিনমজুর মানুষের পাশে দাড়াতে আমরা বিভিন্ন সময় লক্ষ করেছি। তাদের মধ্যে অন্যতম হল-দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে বড় ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এইবারেও তার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করিনি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশে, বিভাগীয়, জেলা পর্যায়ের এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতা কর্মীরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নিজেরা হ্যান্ডসেনিটাইজার তৈয়রী করে, বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে মাস্ক সংগ্রহ করে, চাল, তেল, ডাল, সাবান, ইত্যাদি বস্তা ভরে, কাঁধে করে, বাইকে করে মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দিতে আমরা লক্ষ করেছি।

সবচেয়ে দুঃখ জনক এবং লজ্জাজনক, দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে ছাত্রলীগের ছেলেগুলো যখন নিজদের, পরিবারের কথা চিন্তা না করে, দেশের মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করার কাজে ব্যস্ত, ঠিক তখনি আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত কিছু সদস্যরা,তাদের যাওয়া আসার পথে ধরে ধরে মারধর করে ভিডিও বানিয়ে সে গুলো নিয়ে ট্রল করছে।

আমরা এক ভিডিওতে লক্ষ করেছি আমাদের এক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ছাত্রলীগের এক কর্মীর মুখে মাস্ক, মাথায় হেলমেট,থাকার পরেও কি লীগ, কি লীগ বলে পিটাতে লক্ষ করেছি।

  • মনে হচ্ছে ছাত্রলীগ কোন সংগঠন নয়
    ছাত্রলীগ যেন দেশের নিষিদ্ধ কোন সংগঠন
    যে সংগঠনের প্রতিটা কর্মীই অপরাধী…
    যে সংগঠনের কর্মী পেলে দেশের লোমহর্ষক কোন অপরাধী পেয়েছে মনে হয়।

এটা শুধু ছাত্রলীগের জন্য নয়, এটা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য ও অপমান জনক, আমি মনে করি।

আপনারা প্রশাসনের কর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন রাস্তায় যেন মানুষ উঠতে না পারে সে কাজ করছেন।মানলাম সেটাই আপনাদের কাজ।কিন্তু দিনমজুর মানুষগুলো যারা আপনাদের পিতামাতা, ভাইবোনদের মত রক্তে মাংশে গড়া।এই মানুষগুলো গত একসাপ্তাহ ধরে কি খাচ্ছে সে কথা কি একবার ও ভেবেছেন!!??

জানি আপনাদের ভাবার সময় ও নাই। আপনাদের হাতে আইনি শক্তি আছে। যেটা দিয়ে আপনাদের পিতার সমবয়সী মানুষকে কানে ধরিয়ে ছবি তুলে ট্রল করতে পারবেন।আপনাদের হাতে অস্ত্র আছে যেটার ক্ষমতা দেখিয়ে কি লীগ,কি লীগ বলে কুকুরের মত করে মানুষের পাশে দাড়ানো ছাত্রলীগকে পিঠাতে পারবেন।

আপনাদের গায়ে পোশাক আছে, চাইলেই আপনি বৃদ্ধ বাবা মা ও ছেলে সন্তানের জন্য ঔষুধ কিনতে যাওয়া মানুষগুলোকে কোন কিছু চিন্তা না করে নির্বিচারে আঘাত করতে পারবেন।কারন আপনারাইতো স্বাধীন দেশের একমাত্র নিয়ন্ত্রক।আমরা তো আমজনতা। অথচ হওয়ার কথা ছিল তার উল্টোটা।

এভাবে গরিব মানুষের পাশে দাড়ানো ছাত্রলীগের কর্মী ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছেলেরা যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মার খেতে থাকে তারা আতংকিত হয়ে হয়তো ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর পাশে আর দাড়াবেনা। তাদেরকে করোনার ভাইরাস থেকে সচেতন ও করতে যাবে না। তখন দেখবেন ব্যপক হারে করোনা বিস্তারের পাশাপাশি আনেক মানুষ না খেয়েও মারা যাবে।

তাই আমাদের দাবি, যাতে নির্বিঘ্নে, ছাত্রলীগ এবং সেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে আসহায় মানুষগুলো কে করোনা সম্পর্কে সচেতন এবং খাবারের ব্যবস্থা করতে পারর সেই ব্যবস্থা করুন।

আসুন আমরা সবাই ঘরে থাকি, নিজেরা নিরাপদ এবং দেশকে নিরাপদ রাখি। খুব তারাতাড়ি হয়তো আমরা করোনা নামক মহামারীর হাত থেকে রেহাই পাবো।

আল্লাহ আমাদের সহায় হউক।

লেখক-
আমানত উল্লাহ সাকিব
প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান
উখিয়া কলেজ।