‘কি জমানায় আইলামরে বাবা!’

আলমগীর মাহমুদ •

আলী হোসাইন । প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ায়। গুরুগিরির বয়স ১৯ ছূঁই ছুঁই। ৬/১১/২২ খ্রী: এইচ,এস,সি পরীক্ষার আগেরদিন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়িয়েছিল এমন এক ছাত্রী ফোন করে দোয়া চায়।

গুরুগিরির এই উপহার স্যারের অন্তঃরাত্মা মজিয়ে আবেগ প্রবণ করে। ছিলাম সামনে বসা। অতি সন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশে কইতে রয় ছাত্রীটির জীবনালেখ্য।

‘মেয়েটা এতবেশী মেধাবী প্রাইমারী পড়তে অনেক রকমের পাঠ্য পড়তে দিতাম। রাতে নিলে সকালে এসে বইটি ফিরিয়ে কইতো ‘ পড়া শেষ স্যার’।

নাফিসা নাম। তার ভাইবোনের উপরে উঠার ফিরিস্তি বর্ণনায় রয় , মেধার গুণে আর্শীবাদ যোগ হলে মানুষ কতদূর বড় হয়,কতদূর উপরে উঠে! উচ্ছসিত হয়ে কইয়া ফেলে এই মেয়েটা নির্ঘাত মেডিকেলে চান্স পাবে!

পাকঘর থেকে এবার বোন এসে কইয়া ফেলে আল্লাহ মেয়েটারে কামিয়াব করুক কবে পড়িয়েছিল আজও মনে রেখেছে!

শাহেরীন শায়েরী কক্সবাজার বর্ডার গার্ড স্কুলে
নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ভাগিনী আমার। হঠাৎ প্রশ্ন কইরা বয় ‘ আব্বু (আলী হোসাইন) কয়জন তোমারে দোয়া চেয়েছে?

… দুইজন। (মহসিন কাজল,নাফিচা)
…মাত্র দুইজন!
এবার আমারে প্রশ্ন করে মামা আপনারে কয়জন ?
…..একজনও না!

….কেন?
…. আপনি না বিভাগীয় প্রধান!

বলি কাল যারা পরীক্ষার হলে বসবে তাদের বেশীর ভাগের দাদা দাদীরাই জানেনা নাতিরা পরীক্ষার হলে যাবে!

তাঁদের বুকে অমূল্যের ধন আর্শীবাদ সে কি অমূল্য সেটি বোধে দেবার মা বাবা এ যুগে যে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে খোঁজন লায়!

শুভ কাজের আগে সন্তানদের প্রণাম, আর্শীবাদ , গুরুভক্তির মত সামাজিকীকরন শেখানোর মাতাপিতা আজ বিলুপ্ত প্রায়!

গোগল,ইউটিউবের মুরুব্বিয়ানার যুগে মা,বাবারাই এসব পুরনো দিনের বেদরকারি কাম ভাবছে। ভাবাচ্ছেনা গুগল ইউটিউবের সব থাকলেও নেই আর্শীবাদ শক্তি। সন্তান সুখী করতে আর্শীবাদ যে অমরণীর দাবাই তাহ তারা বেমালুম!

আজকালের মা বাবারা ফেবু’তে পোস্ট দেয় আমার ‘ক’ আগামীকাল এইচ,এস,সি পরীক্ষায় অংশ নিবে দোয়া করবেন।

দোয়া দয়ার ধন।কায়মনে সন্তুষ্টির প্রাপ্তি। এটি কি কমান্ড! আদেশ! না বিনয়! পরখ করা মুশকিল!

পরীক্ষা পাসের মিষ্টিতে স্যারদের কৃতজ্ঞতা জানানোর রেওয়াজতো বিলুপ্তই। আরো ভেংচি কাটে ‘টাকা ছাড়া পড়েছি?

এসব প্রজন্মরে সার্টিফিকেট ধারী বানাওন যায় কোনমতে তাহা ঠিক, কিন্তু ঐসব মা বাবাদের বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠানোর গ্যারান্টি দেওন কঠিন! তারাই যে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর বীজ বুনছে হর হামেশা!

দেশ জাতি ময়মুরুব্বিদের করছে অনিরাপদ ! মূল্যবোধের সোনার বাংলা চাষীদের পরিণত করছে সোনার হরিণে!

 

লেখকঃ বিভাগীয় প্রধান। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। উখিয়া কলেজ কক্সবাজার।
alamgir83cox@gmail. com