দীর্ঘ ১ বছর পর টাইগারদের রাজকীয় জয়

সকাল থেকেই আকাশ মেঘে ঢাকা। দুপুরেও মিরপুরের আকাশ জুড়ে সূর্যের দেখা নেই। মেঘাচ্ছন্ন চারধার। জিম্বাবুয়ের ইনিংসেও সেই আঁধার! ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে খেলা চলল। কিন্তু তাতেও জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ে আলোর দেখা মিলল না। দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেল তারা ১৮৯ রানে। ঢাকা টেস্ট জিতল বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে।

ব্যাটিংয়ে মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরি ও অধিনায়ক মুমিনুলের ১৩২ রান বাংলাদেশের জন্য জয়ের মঞ্চ সাজিয়ে দেয়। নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলামের স্পিনে সেই মঞ্চ থেকে জয় নিয়ে ফিরল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রানে ৫ উইকেট পান নাঈম। ম্যাচ ফিগার তার ১৫২ রানে ৯ উইকেট। টেস্টে এটি নাঈমের ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্স।

ব্যাটে-বলে-অধিনায়কত্ব- মেজাজে সব বিভাগে জিম্বাবুয়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থেকে সিরিজের একমাত্র এই টেস্ট ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে পেছনের টানা ছয় টেস্টে হারের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেল।

টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে কোনো প্রতিপক্ষকে হারাল। এর আগে ২০১৮ সালে এই মিরপুরেই বাংলাদেশ ইনিংস ও ১৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। টেস্টে এখন পর্যন্ত সেটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়।

মিরপুরে চতুর্থ দিনের সকালটাই শুরু হলো একটাই অপেক্ষা নিয়ে-কখন অলআউট হচ্ছে জিম্বাবুয়ে? আগের দিনের ২ উইকেটে ৯ রান নিয়ে খেলতে নেমে সকালের সেশনেই আরো তিন উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। ৫ উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় সফরকারীরা। হারের মুখে দল-এমন সময় নিশ্চয়ই লাঞ্চও খুব একটা উপাদেয় লাগার কথা নয় তাদের।

লাঞ্চের পর প্রথম ঘণ্টায় সিকান্দার রাজার উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। তবে তাইজুলের যে বলে সিকান্দার রাজা আউট হলেন সেটা কোনমতেই উইকেট শিকারি বল নয়। মাঝ উইকেটে পড়া লংহপ পাওয়া লোপ্পা বলে জোরালো পুল শট খেলার চেষ্টা চালান রাজা। কিন্তু মিড উইকেটের বাধা পার করতে পারেননি। মুশফিক লাফিয়ে উঠে ক্যাচ ধরেন।

জিম্বাবুয়ে তখন ৬ উইকেটে ১২১ রান।

ফিল্ডিং ছড়িয়ে দিয়ে রেগিস চাকাভাকে শট খেলার আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাইজুলের বলে সেই লোভের ফাঁদে পা দিলেন চাকাভা। মিড অনে লাফিয়ে উঠে দু’হাতে তামিম দর্শনীয় কায়দায় ক্যাচটা নিলেন।

স্কোরবোর্ডে জিম্বাবুয়ে তখন ৭ উইকেটে ১৬৫।

লাঞ্চের পর ড্রিঙ্কস ব্রেকের পরে প্রথম ওভারেই আরেকবার সাফল্যের আনন্দে ভাসেন নাঈম হাসান। আইন্সলে লভুকে ৪ রানে এলবিডব্লু করে নাঈম হাসান ম্যাচে নিজের ৮ উইকেট পুরো করেন।

বাংলাদেশ তখন জয় থেকে ২ উইকেট দূরে দাঁড়িয়ে। খানিকবাদে মারুমাকে লং অফে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে নাঈম জয়ের ব্যবধান আরো কমিয়ে আনেন। সেই সঙ্গে ইনিংসে নিজের পাঁচ উইকেট শিকারও সম্পন্ন।

জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেট নিয়ে তাইজুল ম্যাচের ইতি টানেন। রিভিউ নিয়েও চার্লটন শুমা রক্ষা পাননি। পরিষ্কার এলবিডব্লু।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৬৫/১০ (১০৬.৩ ওভারে; মাসভাউরে ৬৪, কাসুজা ২, আরভিন ১০৭, টেলর ১০, সিকান্দার রাজা ১৮, মারুমা ৭, চাকাভা ৩০, তিরিপানো ৮; নাঈম ৪/৭০, রাহী ৪/৭১ ও তাইজুল ২/৯০)।

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৬০/৬ ডিক্লেয়ার্ড (১৫৪ ওভারে; সাইফ ৮, তামিম ইকবাল ৪১, নাজমুল হোসেন শান্ত ৭১, মুমিনুল হক ১৩২, মুশফিক ২০৩*, লিটন ৫৩*; আইন্সলে লভু ২/১৭০)

জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস: ১৮৯/১০ (৫৭.৩ ওভারে; কেভিন কাসুজা ১০, টেলর ১৭, আরভিন ৪৩, সিকান্দার রাজা ৩৭; নাঈম হাসান ৫/৮২ ও তাইজুল ৪/৭৮)।

ফল: বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: মুশফিকুর রহিম।