দুই নাবিকের বর্ণনায় ৩২ দিনের জিম্মি জীবন

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা :

সোমালিয়ার জলদস্যুদের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত এমভি আবদুল্লাহ এখন দুবাইয়ের পথে রয়েছে। ওই জাহাজে থাকা দুই নাবিক গতকাল সোমবার মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন আজাদীর আনোয়ারা প্রতিনিধির সঙ্গে। তারা হলেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন ও মোহাম্মদ শামসুদ্দীন। সাজ্জাদের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ

ইউনিয়নের উত্তর বন্দর গ্রামে। আর শামসুদ্দীনের বাড়ি দক্ষিণ বন্দর গ্রামে।

দুজনেই ৩২ দিনের জিম্মি জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন। তারা জানান, বন্দুকের সামনে থাকতে হতো সবসময়। অনেকবার বন্দুকের নল দিয়ে গুঁতা দিয়েছে দস্যুরা। ছাগল এনে তেহারি খাওয়ানো, নামাজ আদায়, হাসিখুশি ছবি তোলা–সব তাদের ইচ্ছায় হয়েছে। বাস্তবতা হলো, প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুভয় তাড়া করত। শেষের দিকে তারা জবাই করার জন্য দুটি ছাগল আনে। এর মধ্যে দেড়টা খেয়ে নিয়েছে তারা। ২৩ নাবিককে দেওয়া হয়েছে সামান্য মাংস। উদ্ধার প্রক্রিয়া কৌশলে সম্পন্ন করায় জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান দুই নাবিক।

নাবিক সাজ্জাদ হোসেন সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, মহান আল্লাহ আমাকে নতুন জীবন দান করেছেন। এ যেন দ্বিতীয় জীবন। মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছি। সোমালিয়া জলদস্যুদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে সবসময় উদ্বেগ–উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। বন্দী জীবনের কষ্টের কথা বর্ণনা করার মতো নয়।

তিনি বলেন, মুক্তির এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকার, জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ সহায়তা ছিল। আলহামদুলিল্লাহ! কী যে খুশি লাগছে, বলে বোঝানো যাবে না। আমরা এখনো সোমালিয়ার সীমানায় আছি। সোমালিয়ার জলসীমা পার হতে আরো তিন–চার দিন লাগবে। দুবাই পৌঁছার পর কর্তৃপক্ষ যেভাবে পাঠাবে সেভাবে ফিরবেন বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাড়ি থেকে আসার সময় আমার এক আত্মীয়ের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। এখন বাড়ি গিয়ে পরিবার ও আত্মীয়–স্বজনের সাথে আলোচনা করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার ইচ্ছা আছে।

আরেক নাবিক মো. শামসুদ্দিন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে জীবন ফিরে পেয়েছি। জলদস্যুরা আমাদের মোবাইল নিয়েছিল। সেগুলো ফেরত দেয়নি। বর্তমানে আমরা তিন নাবিক মিলে একটা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি। মুক্তি পাওয়ার পর কত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব তা নিয়ে ব্যাকুল আছি।

তিনি জানান, জলদস্যুরা তাদের সাথে বাজে আচরণ করেছিল। অস্ত্র বুকে, পিঠে তাক করে রাখত। গাদাগাদি করে এক রুমে থাকতে হতো। বেয়নেট দিয়ে খোঁচা দিয়ে ভয় দেখাত। তাদের খাবার খেয়ে নিত। মনে হতো যমের সামনে আছি। যেকোনো মুহূর্তে মরে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু সকলের দোয়ায় বেঁচে আছি। জাহাজের মালিকপক্ষের সহযোগিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।