দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত খুলছে কাল: ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি

কক্সবাজার জার্নাল ডটকম •

টানা ১৩৯ দিন বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৯ আগষ্ট বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের।

সে অনুযায়ী পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে দেশের সর্ব বৃহত পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। পহেলা এপ্রিল থেকে বন্ধ থাকা পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার ঘোষণায় কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।

আবাসিক হোটেল-মোটেল, রেস্তরাঁ ট্যুরিস্ট বোট গুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। সৈকতকে স্বরূপে ফেরাতে নতুন করে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ী, শামুক-ঝিনুকের দোকানদার, বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার, অটোচালক, সৈকতের ছাতা-বেঞ্চ ব্যবসায়ী, চা-পানের দোকানদার, চটপটি বিক্রেতা, ট্যুর অপারেটরসহ পর্যটনকেন্দ্রিক সব ব্যবসায়ীরাও নিজ নিজ ব্যবসাকে নতুন করে সাজাতে শুরু করেছেন।আবাসিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউসও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সাজানো-গোছানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।

সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, লকডাউনের কারণে কোথাও কোনো কোলাহল নেই। আছে শুধু সাগরের ঢেউ আর সবুজ ঝাউ গাছের অরণ্য। সব মিলে প্রকৃতি যেন নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে নিজেকে। পর্যটকদের বরণে কক্সবাজারে হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পর্যটন স্পট, সাবরাং এক্সক্লুসিভ জোন, ন্যাচার পার্ক, টেকনাফ বার্মিজ মার্কেট, ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, রামু রাম কুট বৌদ্ধ বিহারসহ দর্শনীয় স্থানগুলোকে আকর্ষণীয় করে সাজানো হচ্ছে। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে হোটেল-মোটেলগুলোকে সাজানো হচ্ছে নবরূপে। চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। তবে বৈরী আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিনে এখনো শুরু হয়নি পর্যটক বরণের প্রস্তুতি।

স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সব মিলে টানা লকডাউনে নতুন রূপ পেয়েছে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোন।হাজারো পর্যটকদের বরণের জন্য প্রস্তুতির শেষ নেই।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানালেন, পর্যটন খাতকে ঝুঁকিমুক্ত করতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।দীর্ঘদিন বন্ধ পড়ে থাকা হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউজসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধোয়ামোছা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ নানা প্রস্তুতি চলছে। কক্সবাজারে ৪০০টির অধিক আবাসিক হোটেল–মোটেল-গেস্ট হাউস রয়েছে।প্রতিটি হোটেলের মালিকই বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। টাকার অঙ্কে হিসাব করলে গত দেড় বছরে হোটেল ব্যবসায় কমপক্ষে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রিক সব ব্যবসা মিলিয়ে কমপক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ‘করোনাকালের পর পর্যটনের দ্বার উম্মুক্ত হতে যাওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্র স্বরূপে ফিরবে, সে আশায় বুক বেঁধে আছি। আশা করছি করোনার কারণে এ শিল্পের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে সক্ষম হব।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত সবাইকে সরকারের দেয়া শর্ত মানতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট ও বিনোদনকেন্দ্র আসন সংখ্যার ৫০ শতাংশ ব্যবহার করে চালু করতে পারবে না। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। রাত ৮ পরে সীবিচে কেউ ঘোরাঘুরি করতে পারবে না। এর ব্যত্যয় যাঁরা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য গত বছর করোনা সংক্রমণের গোড়ার দিকে ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে বন্ধ হয়েছিল পর্যটন। এরপর সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে গত বছরের ১৭ আগস্ট চালু হলেও চলতি বছরের ৫ এপ্রিল আবার বন্ধ হয়ে যায় পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র।