নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে আতঙ্কিত চালকেরা


ডেস্ক রিপোর্ট • স্টপেজের লাইগা নির্দিষ্ট জায়গা নাই। যা-ও একটু জায়গা দেইখা গাড়ি খাড়া করাই, সার্জেন্ট আইসা ধরে, মামলা দেয়। এই মামলার টেকা দেওন লাগে আমগো পকেট থেইকা। খালি এই মামলা না, যত দুনিয়ার মামলা খাই, তার বেশির ভাগ টেকা আমগো পকেট থেইকাই দেওন লাগে। আর এহন যে আইন করছে, তাতে আমগো খবরই আছে। ফকির হইয়া যামু। ড্রাইভারিই আর করতে মন চায় না। নতুন আইন নিয়া আসলেই ভয়ে আছি, কী জানি হয়।’

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে দৈনিক জাগরণের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন বাসচালক বশির আলী। কেবল বশির আলীই নন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে এমন আতঙ্ক রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী অধিকাংশ বাসচালকের। শুধু তা-ই নয়, বাসচালকদের পাশাপাশি ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের পেশাদার চালকেরাও রয়েছেন আতঙ্কে।

চালকদের অভিযোগ, অবৈধ পার্কিংসহ নানা অজুহাতে করা মামলা দিয়ে পুলিশ তাদের কাছ থেকে যে টাকা নেয়, সেটা মালিকরা দেন না। তাদের পকেট থেকে দিতে হয়। আর বেতনভুক্ত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের চালকদের বেতন থেকে পুলিশের করা জরিমানার টাকা কেটে রাখেন অধিকাংশ মালিক। এ কারণে পুলিশি মামলা নিয়ে পরিবহনের চালকেরা যুগপৎ আতঙ্কিত ও বিরক্ত।

এদিকে ১ নভেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। নানা প্রতিকূলতার কারণে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত আইনটি বাস্তবায়িত হয়নি। আইনটি সম্পর্কে ঢাকার ট্রাফিক বিভাগ এখনো প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত। ফলে আপাতত মামলা করা হচ্ছে না। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, আগামী সপ্তাহ থেকেই নতুন আইন কার্যকর করা হবে।

নতুন আইনের বিষয়ে বনানী লেকের পাড়ে কথা হচ্ছিল বেতনভুক্ত প্রাইভেট কার চালক তাজুল ইসলাম রানার সাথে। বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই তো পুলিশ নানা অছিলায় জরিমানা করে, এখন আবার যোগ হয়েছে ভিডিও। কখন কোন ফাঁক দিয়া ভিডিও কইরা নেয়, এটা তো বলা মুশকিল।’

রানা আরো বলেন, ‘সাহেবের অফিসে পার্কিংয়ের জায়গা নাই। রাস্তায় গাড়ি রাখতে হয়। বেশি দূরে গেলে বকা খাওয়া লাগে। রাস্তায় রাখতে গিয়া মামলা খাইছি কয়েকবার। সাহেব বেতন থেইকা মামলার টাকা কাইটা নিল। এইটা যখন জিগাইলাম, সাহেব কইল, দোষ নাকি আমার। মামলা নাকি আমি ইচ্ছা কইরাই খাই, অন্য ড্রাইভাররা এত মামলা খায় না।

অন্যদিকে প্রাইভেট কারের মালিক ও বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়সাল চৌধুরী বলেন, ‘মেয়েকে স্কুলে আনা-নেয়া করতে প্রতিদিন গাড়ি পাঠাই। স্কুলে বহু গাড়ি যায়, জ্যাম তো এমনিতেই হয়। স্কুলের পার্কিং ব্যবস্থা নেই, তাই পার্কিংও করতে হয় রাস্তায়। এ অবস্থায় প্রায়ই মামলা খেতে হয়। এমনও মাস গেছে, মেয়ের স্কুলের পাশে ৪টি মামলা খেতে হয়েছে। পার্কিংয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না করে কড়া আইন করে আমাদের ভোগান্তি বাড়িয়ে কী লাভ? আমরা কি বিনা ট্যাক্সে, কাগজে গাড়ি চালাই?’

রাজধানীর গণপরিবহনগুলোর চালকদের অনেকেই মনে করেন, ঢাকার রাস্তার যে অবস্থা, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় আইন মানা সম্ভব হয় না। যাত্রী ওঠা-নামার জন্য পর্যাপ্ত বাস স্টপেজ নেই। তাই বাধ্য হয়ে স্টপেজ ছাড়াই যাত্রী ওঠানো-নামানো করতে হয়। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তীব্র যানজটের শহর ঢাকায় এমনিতেই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন, তার ওপর পুলিশি ঝামেলা। এত প্রতিকূলতার মধ্যে ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনটা অব্যাহত থাকলে এই পেশা ছেড়ে দেয়া ছাড়া তাদের বিকল্প নেই।