পাপিয়ার ‘পাপের’ আরেক আস্তানার সন্ধান!

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ নরসিংদী যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নুর পাপিয়া ওরফে পিউয়ের আরেকটি পাপের আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ওই আস্তানাটি। আওয়ামী লীগের প্রায় ২ ডজন প্রভাবশালী নেতা ও নেত্রীর সহায়তায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন এই পাপিয়া।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় দিন বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পাপিয়া নিজেই এ তথ্য দেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে উদ্ধৃত করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্ষমতাসীন দলের এসব নেতা-নেত্রীকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন পাপিয়া। এই সুযোগে নরসিংদী জেলা মহিলা যুব লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নেন তিনি। আর ওইসব নেতাদের মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী-এমপিও আছে। কয়েকজন সাবেক এমপিও পাপিয়াকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিতেন। তদন্তকারী সংস্থা, এসব নেতাদের বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েছে।

রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর থেকে পাপিয়ার অপরাধ জগতের শুরু থেকে শেষ সব বিষয় সামনে চলে আসছে। এরই মধ্যে ধানমন্ডি এলাকায় পাপিয়ার আরেকটি ‘পাপের সাম্রাজ্যের’ সন্ধান পাওয়া গেছে। ধানমন্ডিস্থ আবাহনী ক্লাব সংলগ্ন একটি বাড়ির ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানে সুন্দরী তরুণী মেয়েদের অনৈতিক কাজের জন্য পাঠাতেন পাপিয়া। আর সেখানকার বেশির ভাগ কাস্টমার ছিলেন নেতারা। এসব খদ্দের নেতাদের জন্য রাজধানীর একটি সরকারি মহিলা কলেজের কিছু ছাত্রী পাপিয়ার মাধ্যমে ওই ফ্ল্যাটে যাতায়াত করতেন।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন,পাপিয়ার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। পাপিয়ার অনেক সহযোগী আছে, এখন পর্যন্ত তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে আছে। আমরা তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছি।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার অপরাধ জগতের বিভিন্ন তথ্য। অল্প সময়ের মধ্যে তার আসল চরিত্র জানাজানি হয়। পাপিয়ার মোবাইলে থাকা ভিডিও দেখে অবাক বনে যান র‌্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা। ওই সব ভিডিওতে ধনী ব্যবসায়ী, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী নেতাদের ‘অনৈতিক দৃশ্য’ আছে। ভিডিওগুলোর মধ্যে কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, খারাপ ভিডিও দিয়ে কাস্টমারদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন পাপিয়া। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া তার সহায়তা প্রভাবশালীদের নাম বলেছেন। এদের সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেত্রী। তাদের মদদেই পাপিয়া ভয়ংকর বেপারোয়া জীবনযাপন করা শুরু করেন। এমনকি পাপিয়া কাউকেই পরোয়া করতেন না। যাদের নাম এসেছে তারা খুবই প্রভাবশালী, তাদের ব্যাপারে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিত করা হয়েছে।

রাজনীতির আড়ালে পাপিয়া অর্থ পাচার, জাল টাকা সরবরাহ, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে টাকা আদায়, তদবির বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা, প্রতারণা ও নারীদের নিয়ে যৌন কারবার চালাতেন। ঢাকার পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে প্রায়ই মদের আসর বসাতেন পাপিয়া। ওই আসরে রাজনৈক নেতা, ব্যবসায়ী, আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কর্মকর্তাও উপস্থিত থাকতেন। তারা সুন্দরী নারীদের নিয়ে ফুর্তি করে গভীর রাতে বাসায় চলে যেতেন।

তদন্তের বিষয়ে বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, বিমানবন্দর থানার এক মামলার রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া। তার দেওয়া তথ্যে আমরা অবাক হচ্ছি। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে ওয়েস্টিন হোটেলের কে কে জড়িত ছিল, তার অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসায় কারা জড়িত ছিল, তার সঙ্গে পাওয়া জাল টাকার উৎস কী, কাদের আশ্রয় প্রশয়ে তিনি এ পর্যায়ে এসেছেন সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামী এবং দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে বিদেশি মুদ্রা ও জাল টাকার মামলা হয়েছে। অস্ত্র ও মাদকের পৃথক মামলা হয়েছে শেরে বাংলা নগর থানায়।

এ দিকে, বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়া ওরফে পিউয়ের অবৈধ পথে উপার্জন করা সম্পদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)৷ বুধবার বিকালে দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলওয়ার বখত এ তথ্য জানান।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক। পাপিয়ার ঘটনাটিও অনুসন্ধান করা হবে। এ ক্ষেত্রে যদি অন্য কারও নাম চলে আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেবে দুদক। তিনি আরও বলেন, পাপিয়ার সম্পদ, তার উৎস, ক্ষমতা, বিদেশে অর্থ পাচার সবকিছুই অনুসন্ধানের আওতায় আছে।