বন্দিত্বই যখন মুক্তি

ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী ◑

সারাবিশ্ব আজ স্থবির হয়ে গেছে। থেমে গেছে সব চাকা। রাস্তাঘাট, অফিস আদালত নগর বন্দর কোথাও মানুষের ভীড় নেই, কোলাহল নেই, নেই চিরচেনা সেই আয়োজন।

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক অণুজীব কী এক সীমাহীন দুঃসাহস দেখিয়ে সারা বিশ্বটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এক নীরব প্রলয়নাচন নেচে চলেছে। কোন পরাশক্তি আজ ‘শান্তির জন্যে’ যুদ্ধে লিপ্ত নয়। অর্থনৈতিক ক্ষমতাধর দেশগুলোর বাজার দখলের প্রতিযোগিতা নিমিষেই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই কোথাও, নেই কোন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। তাদের সবাই আজ নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাবার যুদ্ধে লিপ্ত।

নীরব এই অণুজীব যুদ্ধে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে একদল নিরস্ত্র চিকিৎসা সৈনিক। অচেনা এই অণুজীব শত্রুর সাথে লড়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন নিরলস অবিরাম। অস্ত্রের অপর্যাপ্ত যোগান, রসদের অপ্রতুলতা এসবের কোন কিছুই যেনো থামাতে পারেনি এই অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধাদের। থামাতে পারেনি কোন পিছুটান, প্রিয়জনের স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা। সমস্ত পিছুটান, সমালোচনা ছাপিয়ে এই যুদ্ধাহত মানুষগুলোই হয়ে উঠেছে আজ তাদের সবচাইতে আপনজন।

‘ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন, জীবন বাঁচান’ -এই শ্লোগানই আজ এই অণুজীব যুদ্ধের মূলমন্ত্র। আমরা যারা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত, তারা আপনার জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্যে, আপনার জন্যই হাসপাতালেই অবস্থান করছি। অপ্রস্তুত এই যুদ্ধে জানি হয়তোবা সেই সেবা অপর্যাপ্ত। তবুও আমাদের সীমিত সাধ্য আর সামর্থ্যের বিচারে জীবন বাজি রেখে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব, এটুকু অন্তত বলতে পারি।

ছোটবেলায় বাংলা সিনেমার একটা সংলাপ আমাদের মস্তিষ্কে এখনো গেঁথে আছে- ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না’। আজও তার সংগে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, পিপিই বা চিকিৎসকদের কিংবা চিকিৎসা প্রদানকারীর ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম নিজের গায়ে তুলে নেবেন না। আমাদের অস্ত্র আমাদের হাতে তুলে দিন। আমরা আপনাদের এই যুদ্ধে জিতিয়ে দেব ইন শা আল্লাহ।

আজ এই দূর্যোগময় মূহুর্তে শুধু এটুকুই চাওয়া- আমাদের জন্যে, আপনাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে অন্তত কয়েকটা দিন ঘরে থাকুন। আপনার এই ধৈর্য্যপূর্ণ বন্দিত্বই পারে এই অণুজীব যুদ্ধে আমাদের জেতাতে। এই বন্দিত্বই আজ তাই মুক্তির মূলমন্ত্র।

———————————————–
ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী
প্রধান, জরুরি বিভাগ ও
আবাসিক মেডিকেল অফিসার,
জেলা সদর হাসপাতাল, কক্সবাজার।