বন্ধ পেপার মিল, রোহিঙ্গাদের কারণে বাঁশের ওপর প্রভাব

ডেস্ক রিপোর্ট – বাংলাদেশে বাঁশ উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা এবং ব্যবহার দুটোই বেশি। তারপরও মোটামুটি চলছিল বাঁশনির্ভর বিভিন্ন কাগজকল। টিনের ঘর, বাঁশের বেড়া তৈরিতে আগের মত বাঁশের ব্যবহার না হওয়ায়, বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও রফতানি খাতে বাঁশের খুব বেশি সংকট দেখা দেয়নি।

কিন্তু গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ীভাবে নির্মিত প্রায় দুই লাখ বাসস্থানের পুরোটাই নির্মাণ হয়েছে বাঁশ দিয়ে। সেই হিসেবে প্রতিটি ঘর বানাতে গড়ে ৪০টি করেও যদি বাঁশ ব্যবহার হয়, তাহলে ৮০ লাখ বাঁশ ব্যবহার হয়েছে এই কাজে। অন্যদিকে বাঁশনির্মিত ঘর দুই বছরের বেশি টিকে না।
ফলে খুব সহসা আবারও এসব ঘর মেরামতে প্রয়োজন হবে লক্ষাধিক বাঁশের।এছাড়া সারাদেশে কমবেশি বাঁশের ব্যবহার প্রতিনিয়ত হচ্ছে। তাই উৎপাদিত বাঁশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ব্যবহার হওয়ায় সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বন ও পরিবেশবিদ্যা ইন্সটিটিউটের বাঁশ নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।গবেষণার পরিচালক অধ্যাপক আকতার হোসেন বিষয়টি নিয়ে সঙ্গে কথা বলেছেন। অধ্যাপক আকতার হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার মধ্যে বাঁশের সংকটও একটি।

তিনি জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে বড় ট্রাকে প্রতিনিয়ত বাঁশ আনা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সর্ববৃহৎ কর্ণফুলী কাগজ কল বন্ধ হয়ে গেছে বাঁশের অভাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে দোটানায় ভুগছে। ফলে তাদের কোনো স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারছে না সরকার। অপরদিকে উপায় না পেয়ে বাঁশের ঘর বানাতে গিয়ে অনেক বাঁশের অপচয় হচ্ছে, যা কিছুদিন পর আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।

এদিকে বাঁশের সংকটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন বাঁশ চাষের তাগিদ দিচ্ছে। কিন্তু এত চারা পাবেন কোথায়? বাঁশের যেহেতু অন্য গাছের মত ফল হয় না, সেহেতু সরাসরি চারা সংগ্রহের বিকল্প নেই। এমনকি বেশকিছু প্রজাতির বাঁশ রয়েছে, যেগুলোতে ৩০-৪০ বছরে একবার ফুল হয়। তাও সেখান থেকে পাকা বীজ হবে কি-না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এছাড়াও বাঁশের কোড়ল (কচি বাঁশের ডগা) খাওয়ার যে প্রবণতা আছে, সেটাও কিছুটা প্রভাব ফেলছে।

কঞ্চি থেকে চারাঃ
অধ্যাপক আকতার হোসেন বলেন, আমরা যদি বাঁশের উৎপাদন বাড়াতে পারি, তাহলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। ইতোমধ্যে বাঁশ নিয়ে গবেষণা করে বাঁশের কঞ্চি থেকে চারা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি আমরা। যেখানে একটি বাঁশঝাড় থেকে মাত্র ৪ থেকে ৫টি বাঁশের চারা সংগ্রহ করা যায়, সেখানে নতুন এই প্রক্রিয়ায় একটি বাঁশের অধিকাংশ কঞ্চি থেকেই একেকটি চারা প্রজনন করা সম্ভব। তবে এই বিষয়ে দক্ষতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে বা কোনো সংস্থা যদি চায়, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদেরকে সহযোগিতা করবো। কোনো ইন্ডাস্ট্রি যদি আমাদের কাছে বছরে দুই লাখ বাঁশের চারা চায় এবং এর যাবতীয় খরচ বহন করে, তাহলে সে অনুযায়ী স্থান নির্বাচন, শ্রমিক নিয়োগ, চারা সংগ্রহসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবো। আমরা তাদের চাহিদামতো চারা দিতে পারবো।