বিএনপির পরবর্তী মহাসচিব কি সালাউদ্দিন?

জার্নাল ডেস্ক :

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বড় পরিবর্তন আসতে পারে শিগগিরই। কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে দলটির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদে সম্ভাব্য বড় ‘রদবদল’ এর আলামতও মিলেছে।

সম্প্রতি বিএনপিতে তিন নেতাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে মহাসচিব পদের পরিবর্তনের বিষয়েও নানা গুঞ্জন রয়েছে দলটির অভ্যন্তরে। আর এক্ষেত্রে যে ক’জন শীর্ষ নেতার নাম আলোচনায় আসছে তাদের মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছেন কক্সবাজারের পেকুয়ার সন্তান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ। যদিও তিনি ৯ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতে অবস্থান করছেন। কিন্তু তিনি জিয়া পরিবারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
সালাহউদ্দিন আহমেদ ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। এরপর সরকারি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনবারের সাবেক এই এমপির স্থান হয়েছিল মন্ত্রিসভায়ও। ২০১৫ সালের ১০ই মার্চ যখন তিনি নিখোঁজ হন তখন যুগ্ম মহাসচিবের পাশাপাশি বিএনপি’র মুখপাত্রেরও দায়িত্ব পালন করছিলেন। বর্তমানে তিনি দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। বিএনপিতে তিনি আরও বড় কোনো পদ পান কিনা তা নিয়ে এক ধরনের গুঞ্জন রয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ যখন নিখোঁজ হন তখন তার দল এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গুম করেছে। নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ২০১৫ সালের ১১ই মে শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা করা হয়। এ মামলায় এবং আপিলেও পরে তিনি খালাস পান। তবে এখনও তাঁর দেশে ফেরার সুযোগ হয়নি।
জানা গেছে, বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। দলটির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জাতীয় কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। কিন্তু তিন বছরের কমিটি আট বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে হয়নি একটি কাউন্সিলও।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনকে জোরালো করতে এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে কাজ করছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। এজন্য সক্রিয় নেতাকর্মীদের দিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গুলো ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। বিএনপির কাউন্সিল না হলেও দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাউন্সিল না হলেও শূন্য পদগুলো পূর্ণ করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

বিএনপি সূত্র জানায়, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে থাকায় এ মুহূর্তে কোনো কারণে কাউন্সিল করা সম্ভব না হলেও শূন্য পদগুলো পূর্ণ করা হবে। দলের মূল নেতৃত্ব জিয়া পরিবারের মধ্যেই থাকবে।
এমন পরিস্থিতিতে সালাউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও বিএনপির নতুন মহাসচিবের বিষয়ে বেশ কয়েকজনের বিষয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। এদের মধ্যে, মহাসচিব পদে আলোচনায় রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। অস্থায়ী মহাসচিব হয়ে বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ—রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন গুঞ্জনও চলছে কয়েক দিন ধরে। অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মির্জা আব্বাস।

অন্যদিকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল শেষে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর ২০১৯ সালে বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত মৃত্যু এবং অবসর জনিত কারণে পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। সেই হিসাবে এখন সদস্য সংখ্যা ১৪ জন।

সক্রিয়দের মধ্যে কেবল মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান রয়েছেন। দেশের বাইরে রয়েছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।