মাদকের চালান মায়ানমার -টেকনাফ -বিশ্ব : ফলে কলঙ্কিত বাংলাদেশ

আবদুল নবী

মাদক খুবই ঘৃণিত একটি ইস্যু যা মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরুপ। কোন ব্যক্তি হুট করে মাদকাসক্ত হয় না। অর্থাৎ মাদক মনো আসক্তিকর হলেও তা কোন না কোন মাধ্যমে ধীরে ধীরে মাদকের জগতে প্রবেশ করে সেখানকার স্থায়ী নাগরিকত্ব গ্রহন করে। এই মাদক সবচেয়ে বেশি যারা সেবন করে তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেন ছাত্র সমাজ তথা যুব সমাজ। এই যুব সমাজ হল আগামী দিনের রাষ্ট্রের কর্ণধার। এরাই নেতৃত্ব দিবে, পথ দেখাবে দেশকে। এই দেখানো পথে হেঁটে দেশ উন্নত হবে। কিন্তু আজ আমাদের দেশে সেটা হচ্ছে না। ধ্বংস হচ্ছে এই মহামারী মাদকের ছোবলে সোনার বাংলার সোনার যুব সমাজ, ছাত্র সমাজ।

মাদক ব্যবসায় সিন্ডিকেটের নক্সার মধ্যে বাংলাদেশ এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতেছে যা আজ নামের সাথে সারাবিশ্বে বাংলার বদনাম বেড়ে গেছে এবং যাচ্ছে। মায়ানমার থেকে মাদকের চালান চালানো হয় বাংলাদেশের বর্ডার ক্রস করে। প্রধানত টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে এই মাদকের চালান দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করে। যা পরবর্তীতে টেকনাফ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, মুখোশ ধারী সমাজসেবক তা কুটকৌশল অবলম্বন করে তা উকিয়া হয়ে কক্সবাজার সদরে পৌঁছে। যা মূলত বড় বড় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট থেকে দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এক পর্যায়ে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

এবার আসল কথায় আসা যাক। মায়ানমার থেকে কিভাবে নাফ নদী হয়ে ইয়াবা এর মতো মাদক বর্ডার ক্রস করে দেশে আসে? একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন তো এটা সম্ভব হওয়ার পিছনে কারা আছে তারা আসলেই কারা সেটা। এমপি, মন্ত্রী, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান সহ আরো অনেক। কিন্তু এরা কখনও প্রকাশ্যে থাকে না।এরা ক্ষমতার চেয়ারে বসে এই অপরাধ রাজ্যের মুকুট পরে সাধু সাজে আর টুপ হিসেবে ব্যবহার করে কিছু কিছু হতদরিদ্র স্টুডেন্টদের। শুধু স্টুডেন্ট নয় তারসাথে রয়েছে অসহায় কিছু মানুষদের যাদেরকে পুলিশ কিংবা বিজিবি সন্দেহ করার সম্ভাবনা নেই এমন লোকগুলো। টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে ইয়াবা আসার জন্য যাদের প্রধানত ব্যবহার করা হয় তাদের মধ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠ হলেন স্টুডেন্ট এবং সুন্দরী মেয়ে। এদের দিয়ে তারা কাজ করিয়ে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা পাচার করে তাদেরকে কিছু টাকা দেওয়া হয় যা মূলত বড় অংকের। এই বড় অংকের টাকার লোভে পড়ে নিজেকে স্বচ্ছল করার জন্য গরীব ছাত্রছাত্রী এতে কাজ করে। এই পাচার হওয়া মাদকদ্রব্য দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে দিয়ে যুব সমাজ ও ছাত্র সমাজকে ধ্বংস করা হচ্ছে। আজকাল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেটা মাদকের সিন্ডিকেটের আওতা থেকে মুক্ত। কিছুদিন আগে আমি কক্সবাজার কলাতলিতে সন্ধ্যায় হাঁটতে ছিলাম। তখন কিছু ছেলে মাদক সেবন করতেছে। তাদেরকে ট্রাফিক পুলিশ আটক করে। খবর পাওয়া গেল তারা কেউ অষ্টম শ্রেণির উপরে নয়। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো এই ছেলেগুলোর পকেটে যা ছিল তা নিয়ে ফেলে তাদেরকে ছেড়ে দিলেন পুলিশ। এবার চিন্তা করুনতো যেখানে প্রশাসন নিজেই অবহেলা করতেছে ভবিষ্যত ছেলেগুলোকে সেখানে দেশের উন্নয়ন কি করে সম্ভব? যে জায়গায় এই ছেলেগুলোকে শাস্তি দিয়ে বাবা-মায়ের কাছে জিম্মি করে দেওয়া জরুরী সেখানে তাদের পকেট খালি করে ছেড়ে দিল। তাহলে চিন্তা করুন, তারা কি আদৌও কখনও মাদকগ্রহণকারীদের শাস্তি দিবে নাকি মাদককে নির্মূল করবে?

আরো একটা বিষয় হচ্ছে, যারা মাদক ব্যবসায় জড়িত তারা প্রশাসনকে বাঁ পকেটে রাখে। অর্থাৎ তারা উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা বা তারও উপরে ও বাইরে যত এলাকায় তার আওতায় রেখে মাদক বিক্রি করে সেখানকার প্রশাসন তাদেরকে সাপোর্ট দেয়। কারণ, তাদেরকে তো পকেট গরম করে দেওয়া হচ্ছে।

তাই আমাদের উচিত সচেতনতা তৈরি করা। ছোট্ট ছোট্ট চিংড়ি মাছকে ক্রসফায়ার না দিয়ে রাগব বোয়ালদের ক্রসফায়ার দিলে শাস্তির ভয় এবং জীবন রক্ষার্থে চিংড়ি মাছগুলো এমনি এই পথ থেকে সরে আসবে। আর প্রশাসনকে জবাবদিহি দিতে বাদ্য হতে হবে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে।

আজ বাঙ্গালীদের সারাবিশ্বে ঘৃণা করা হয় এই মাদক সিন্ডিকেটের কারণে। তাই এই কীটপতঙ্গের জন্য বাংলা মায়ের গায়ে কলঙ্কের দাগ যাতে না লাগতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।


আবদুল নবী, কক্সবাজার সিটি কলেজ, কক্সবাজার।