মাদক পাচারে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা

মুহিববুল্লাহ মুহিব :

সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা এখন মাদক ব্যবসা ও পাচারে জড়িয়ে পড়ছে। মাদক পাচার করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে আটক ও গুলিতে মৃত্যু হয়েছে অনেক রোহিঙ্গার। মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গাদের এমন কর্মকান্ডে উদ্ধিগ্ন স্থানীয়রা।
জানা যায়, চলতি বছরের ১ থেকে ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত অন্তত চার রোহিঙ্গা ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। গত দুই মাসে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকসহ আটক হয়েছে অর্ধ-শতাধিক রোহিঙ্গা। এছাড়াও বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী রোহিঙ্গা শিবিরের বিভিন্ন ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা করে ইয়াবা, গাঁজা, বিয়ার ও বিদেশী সিগারেট উদ্ধার করে।
এদিকে টেকনাফের নাফনদীল উলুবনিয়া, খারাইগ্যাঘোনা, হোয়াইক্যং, লম্বাবিল, ঊনছিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, নয়াপাড়া, ঝিমংখালী, মিনাবাজার, নয়াবাজার, খারাংখালী, মৌলভী বাজার, হোয়াব্রাং, সুলিশ পাড়া-কাস্টমস ঘাট, পূর্ব ফুলের ডেইল, নাটমোরা পাড়া-জালিয়াপাড়া, চৌধুরী পাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, রঙ্গিখালী, আলীখালী পয়েন্ট দিয়ে মোচনী, নয়াপাড়া ও জাদিমোরায় অবস্থানকারী ভাসমান রোহিঙ্গারা রাতের বেলা ফিনী বা ঠেলা জালে মাছ শিকারের অজুহাতে ইয়াবার চালান পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। রাতের অন্ধকারে তারা এসব কাজ করে যাচ্ছে বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।
এসব ঘটনার মধ্যে, গত ১২ জানুয়ারী শনিবার ভোরে টেকনাফের হ্নীলার নাফনদীর রঙ্গীখালী মোহনায় মিয়ানমার থেকে মাদক নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিজিবির সাথে ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে মারা যায় দুই রোহিঙ্গা।  তারা হলেন, মিয়ানমারের আকিয়াবের মন্ডু নাগাকুরাস্থ সিকদার পাড়ার মোহাম্মদ আলমের ছেলে আয়াজ উদ্দিন (২৭) ও একই এলাকার বদিউর রহমানের ছেলে ছৈয়দুল আমিন (২৫)।
গত ৫ জানুয়ারী শনিবার কক্সবাজারের মেরিনড্রাইভ সড়কের টেকনাফ অংশ থেকে দুই রোহিঙ্গার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাদকের টাকা নিয়ে ভাগভাটোয়ারার সময় তাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে এ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ। নিহতরা হলেন, টেকনাফের উনছিপ্রাংয়ের পুটিবনিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকের বাসিন্দা মৃত আবুল কাশেমের ছেলে খাইরুল আমিন (৩৫) ও একই ব্লকের হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. আব্দুল্লাহ (৪০)।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির নেতা হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, যাদেরকে আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিলাম তারা এখন বিভিন্ অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। শুধু মাদক নয় খুন ও চুরি করছে তারা। এটি এখনি বন্ধ করা প্রয়োজন। অন্যথায় রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের সাথেও এমন ব্যবহারের আশংকা রয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির নেতা মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, শত কড়াকড়ির মধ্যেও রোহিঙ্গারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ার পর অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধ করা প্রয়োজন এধরণের কর্মকান্ডে রোহিঙ্গারা জড়িত থাকলে আগামীতে চরম হুমকিতে পড়বে দেশ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় পুলিশের তল্লাশী চৌকি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ নিয়মিত তল্লাশীর পাশাপাশি টহলও জোরদার করেছে।
টেকনাফস্থ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল আছাদুদ-জামান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে যোগাযোগ রয়েছে। সে কারণে তারা বিভিন্ন সময় মাদক পাচারে কাজ করছে। কারণ এখানকার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখন রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে। বিজিবি সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে।
মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল বলেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গা শিবিরের বিভিন্ন ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা করে ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। বিশাল এলাকা হওয়ায় রোহিঙ্গারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এধরণের অভিযান অব্যাহত রাখবে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের গোয়েন্দারা।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পে কাটাতারের বেড়া নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।