রত্নাপালং যুদ্ধে আতংকের ক্ষতিটুকুন যেন হয় মোর উত্তরাধিকার!

আলমগীর মাহমুদ

১৭৮৪ সালের শেষদিকে বর্মীরাজ বোধপায়া আরাকান দখল করে রামরী,সানডুওয়ে, মেয়োং, ও আরাকান এই চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে স্বমনোনীত চারজন প্রতিনিধির হাতে আরাকানের শাসনভার অর্পন করেন। 1

বর্মী সৈন্য আরাকান দখলের পরপরই আরাকানীদের উপর নৃশংস অত্যাচার শুরু করে। বর্মী জেনারেল যত সংখ্যক সম্ভব আরাকানীদের গ্রেপ্তার করে স্ত্রীলোক ও পুরুষদের দূ’ভাগে ভাগ করে স্ত্রীলোকদের বার্মা পাঠিয়ে দেয়। পুরুষদের হত্যা করে। 2

এমন অত্যাচারে হাজার হাজার আরাকানি উদ্বাস্তু সীমান্ত পার হয়ে কোম্পানি শাসিত চট্টগ্রামে আশ্রয় নেয়। 3

আরাকানী উদ্বাস্তুদের মধ্যে সর্দার শ্রেণী চট্টগ্রামকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বৈপ্লবিক তৎপরতা শুরু করে। এমন বৈপ্লবিক তৎপরতার ফলে প্রায়ই বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব সীমান্তে বর্মী বাহিনীর সমাবেশ ঘটতো, কখনও তারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতো। বর্মী বাহিনীর উপস্থিতিতে উদ্ভূত বিপদজনক অবস্থা ছিল শান্তি বিঘ্নিত হবার কারণ। 4

১৭৯৯ সালের প্রথম দিকে। উল্লেখযোগ্য, সংখ্যক আরাকানি উদ্বাস্তু সমুদ্র ও পাহাড় পার হয়ে কোম্পানির এলাকায় চলে আসে। পুনরায় আরাকানে ফিরে যেতে কোম্পানির সমস্ত প্রলোভন অগ্রাহ্য করে তারা চট্টগ্রামেই বসতি স্থাপন করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্মী সরকার পলাতক উদ্বাস্তুদের প্রত্যর্পণ করার সুস্পষ্ট দাবী করেন । 5 প্রত্যর্পন দাবীর মুল কারণ উদ্বাস্তুদের সাথে আসা তাদের নেতাদের হাতে পাওয়া।

এছাড়া তিন থেকে চার শ’ বর্মী সেনা রত্নাপালং আসে কোম্পানির ঘাঁটির কাছেই একটি কাঠের দূর্গ নির্মাণ করে। কোম্পানি কমান্ডার Jeams Maclalen তাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে একটা খন্ড যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে তিনজন বর্মী সেনার রক্তে রঞ্জিত হয় রত্নাপালং এর মাটি । পরে এই তিনজন নিহত, অসংখ্য সংখ্যক আহত হলে বর্মীরা পশ্চাদপসরণ করে। 6

পুণরায় ১৭৯৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি আরাকানের মিয়োউন অর্ধেক বর্মী ও আরাকানীদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে কোম্পানির এলাকায় প্রবেশ করেন এবং ত্রিশ থেকে চল্লিশ জন উদ্বাস্তু অপহারণ করেন। 7

চট্টগ্রাম সীমান্তে বর্মীসেনার এই তৎপরতা বহুকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে । ভারতের রাজনীতিতে জঠিল এই অবস্থার জন্য Lord Wellesley কোন কর্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেননিতো পারেননি উল্টো বর্মী সরকারের সাথে উদ্বাস্তুদের বিষয়ে আলোচনার জন্য ১৭৯৯ সালে অক্টোবর মাসে Thomas Hill কে আরাকানের রাজধানীতে প্রেরণ করেন। 8

কোম্পানির নিকট লিখিত চট্টগ্রাম বাঁশখালীর জমিদার শিবচরণের গোমস্তা মুক্তরামের আরজিতে লক্ষ্য করা যায় যে বারপোলং এ আগত বর্মী বাহিনী তাঁর শতাধিক তালুকদার ও রায়তকে অপহরণ করে। স্থানীয় জনগণ ভয়ে রামু এলাকায় পালিয়ে যায়। 9

আতংক মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ, মারাত্নক, বিষাদের । যুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী হয়ে যারা অনিশ্চিত জীবনের শংকায় কাল কাটিয়েছে, ঘরছাড়া হয়েছে, তারাই কক্সবাজারবাসীর পূর্বপুরুষ।

সেই একই ভূমিতে আজ রোয়াইঙ্গারা। তাঁদের সেবায় নিয়োজিত কর্তারাই বলছে রোয়াইঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারবাসীর কোন ক্ষতিই হয়নি বরং লাভবানই হয়েছে ।

এবার না হয় লাভেই রইলাম! পূর্বপুরুষের আতংক, ঘরহারা ক্ষতির উত্তরাধিকারের পাওনটা !!

দোহাইঃ—

Lieutenant Colonel to the Commander -in-chief, Political Consultations (henceforth referred as P. C.), 25 April, 1794 No, 14, Muhammad Siddiq Khan Collections (henceforth referred as M. S.K.C), Political Proceedings, (henceforth referred as p. P.),vol. 1, p. 194

Aspinal, A., English Relations with Burma in the Time of Cornwallis and Shore ( 1786-1798)’, Bengal Past and Present, (henceforth referred as B.P.P.),Vol, XL,11, 1930, p. 101.

Harvey, G.E., Burma, p. 149.

Arzee of Muktaram Gomastah, 16 June, 1787, .

Secretary to Government to T. Hill, P. C.,9 January, 1799, No. 18, M. S.K.C., Vol. 1, pp. 889-90.

Commander to Commander -in- chief, P.C., 11 February, 1799, No. M.S.k.C., P.P., Vol. 3, p. 876.

Captain of Infantry to Secretary to the Government. 19, February, 1799, B. S.R.C.D., Vol. 515, pp. 49–102.

Secretary to Government to Lt.T. Hill. P. C., 29 June, 1799, No. 3. M.S.K.C., P.P., Vol. 4, p. 80

Arzee of Muktaram Gomastah, 16 June, V1787, .D.,ol. B.S.R.,C443, pp. 14-15

লেখক: বিভাগীয় প্রধান (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ)
উখিয়া কলেজ, উখিয়া, কক্সবাজার।
ইমেইল:- alamgir83cox@gmail.com