লাশ দাফনেরও জায়গা নেই যেখানে!

কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক:
সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে হাসপাতালে মারা যান হাবিবুর রহমানের (৩০) স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা (২২)। এরপর নবজাতককে নিয়ে যতটা না চিন্তা, সাদিয়ার দাফন নিয়ে তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে পরিবার। কারণ চারদিকে পানি আর পানি। এ অবস্থায় তাকে দাফন করবে কোথায়? পরে দূরের একটি গ্রামে সাদিয়াকে দাফন করেন হাবিবুর রহমান।

গত জুলাইয়ে আশাশুনির প্রতাপনগর গ্রামের মাহমুদুল হাসান (৩৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে আসা হয়। পূর্ণিমার জোয়ারে চারদিকে পানি। মাটির ওপর কোনোরকম পলিথিন দিয়ে লাশ দাফন করা হয়। কিন্তু এর কয়েকদিন পরেই লাশ পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরা উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত
জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে, সুপেয় পানি ও উপকূল সুরক্ষার দাবিতে শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় আশাশুনির প্রতাপনগরে ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ করেন স্থানীয়রা। পরিবেশবাদী আন্দোলন ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের আহ্বানে এতে উপকূলের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা অংশগ্রহণ করেন।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের দরগাতলা গ্রামে এমন ঘটনা নিয়মিত। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরা উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে ডুবে আছে। জলাবদ্ধতা ও করোনাভাইরাসে এই অঞ্চলের মানুষ বিপর্যস্ত। মানুষের জীবনযাত্রা জোয়ার-ভাটা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে স্থানীয়দের সব সময় তটস্থ থাকতে হয়। অনেক এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন। চিকিৎসা, স্যানিটেশন ও সুপেয় পানিসহ বিভিন্ন সংকটে বিপর্যস্ত উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সাতক্ষীরা জেলা সমন্বয়ক এস এম শাহিন আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে উপকূল আজ ক্ষত-বিক্ষত। মানুষের বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ। অনেকে উপকূল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আগামী জলবায়ু সম্মেলনে আমরা কথার বাস্তবায়ন দেখতে চাই, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘর-দোর, জাগা-জমি সব শেষ। ভাসি-বুড়ি আশ্রয় নিছি একটা দোকানে। আমরা ভাটির সময় জাগি, আবার জোয়ারে ডুবি। এভাবে আর কত দিন থাকবো? বউ-বাচ্চা নিয়ে আর পাত্তিছিনি (পারছি না)। এবার ভাবছি নড়াইল চইলি (চলে) যাবো। বাপ-দাদার ভিটি-মাটি সব গেছে। দুই বছর হতি যাচ্ছে ডুবি মরতিছি। বাঁধ হবার নামনি। বাঁধ-টাধ হলি আবার আসবো।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয় গোটা সাতক্ষীরা উপকূল। পানিবন্দি হয়ে পড়ে উপকূলীয় এলাকার ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ঘর-বাড়ি ধসে পড়ে দুই হাজারেরও বেশি। এখনও শতাধিক ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে আছে। কাজ না থাকায় সেখানকার লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। উপকূলীয় এলাকায় বাস্তুচ্যুত হয়ে আছে হাজারও পরিবার। বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর খুপড়ি ঘরে কোনোরকম বেঁচে আছে তারা
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন