শাহিনের ভ্যান উদ্ধার, গ্রেফতার ৩

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরায় ভ্যানচালক শাহিনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে ভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে ভ্যান ও চারটি ব্যাটারি। সোমবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। 

গ্রেফতার তিনজন হলো- শিশু শাহিনকে হত্যাচেষ্টার মূলহোতা যশোরের কেশবপুর উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের বাবরালী মোড়লের ছেলে নাইমুল ইসলাম নাইম (২৪), সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার আলাইপুর গ্রামের মৃত ভোলাই পাড়ের ছেলে আরশাদ পাড় ওরফে নুনু মিস্ত্রি (৬৫) এবং সদর উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের মৃত হামজের আলীর ছেলে বাকের আলী (৪৫)।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার নাইমুলসহ আরো তিনজন গোপনে বৈঠক করে। ওই সময় তারা নাইমের মোবাইল ফোন থেকে ভ্যানচালক শাহিনকে ফোন দেয় এবং শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে কলারোয়ায় একটা ভাড়া আছে জানিয়ে তাকে সময়মতো কেশবপুর বাজারে চলে আসতে বলে। এজন্য তারা তাকে সাড়ে তিনশো টাকা ভাড়া দেবে বলে জানায়। এরপর সকালে তারা শাহীনের ভ্যানযোগে কেশবপুর হাসপাতালের সামনে দিয়ে সরসকাটি চৌগাছা হয়ে ধানদিয়া জামতলা মোড়ে গিয়ে ফাঁকা জায়গায় ভ্যানটি থামাতে বলে। এরপর ভ্যান রেখে শাহীনকে বাড়ি চলে যেতে বলে। এ বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকিও দেয় তারা। শাহীন ভ্যান দিতে রাজি না হলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ভ্যানের সিটের লোহার সঙ্গে শাহীনের মাথায় জোরে কয়েকবার আঘাত করে তাকে পাটক্ষেতে ফেলে রেখে ভ্যানটি নিয়ে ঝাউডাঙ্গার দিকে চলে যায়। ঝাউডাঙ্গা বাজারে এসে তারা প্রথমে বাকের আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে ৪টি ব্যাটারি ৬ হাজার ২৩৬ টাকায় বিক্রি করে। এরপর তারা কলারোয়া উপজেলার মির্জাপুর মোড়ে গিয়ে আরশাদ পাড় ওরফে নুনু মিস্ত্রির কাছে ভ্যানটি ৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করে। পরে তারা সবাই টাকা ভাগাভাগি করে কেশবপুর চলে আসে।

পুলিশ সুপার বলেন, মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে আমরা জানতে পারি যে, এ ঘটনার মূল হোতা নাইম। এরপর তাকে তার বাড়ি থেকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় অপর দু’জনকে। এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলদতুৎমিশ।

প্রেসব্রিফিং আরো উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) ইলতুৎমিশ, বিশেষ শাখার পরিদর্শক মিজানুর রহমান, পাটকেলঘাটা থানার ওসি রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে রাখা হয়েছে তাকে। এর আগে শনিবার রাতে অস্ত্রোপচার করা হয় তার মাথায়। তার চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে।

ঘটনার পর মারা গেছে ভেবে শাহিনকে প্রথমে সাতক্ষীরা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখা হয়। নড়াচড়া করতে দেখে পরে মর্গের কয়েকজন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা ও শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে গত শনিবার শাহিনের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানায় একটি মামলা করেন।

রোববার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, ‘শাহিনের চিকিৎসা চলছে। তবে সে আশঙ্কামুক্ত নয়। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে।’ এদিকে ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।