সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়াতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠি, মিয়ানমার বিপুল পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করেছে সীমান্তে

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে মিয়ানমারকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) পক্ষ থেকে মামলা করেছে আফ্রিকান রাষ্ট্র গাম্বিয়া। ১০-১২ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজের সদর দফতরে এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দফা শুনানি এবং পাল্টা শুনানিতে অংশ নেবে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার বিপুলসংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করেছে। মামলা থেকে দৃষ্টি অন্য খাতে নিতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে রোহিঙ্গা শিবিরসহ মিয়ানমার সীমান্তে প্রয়োজনীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২৬ নভেম্বর পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ১১ নভেম্বর ওআইসির পক্ষ থেকে গাম্বিয়া জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের গণহত্যাবিষয়ক কনভেনশনের আওতায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে দাবি করে ওই ঘটনায় দুই ধরনের প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে ১০-১২ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। ওই অপরাধের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য সম্মতি দিয়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমার সরকার বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে নির্ধারণ করে ব্যাপক কর্মতৎপরতা শুরু করেছে।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সূচির নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল আন্তর্জাতিক আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। ২৩ নভেম্বর দেশটির রাষ্ট্রপতি সে দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিস্থিতি উত্তরণে করণীয় ঠিক করতে একটি সভার আয়োজন করেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেয়া ওই চিঠিতে পরারাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, মিয়ানমারের ১০টি সশস্ত্র নৃতাত্ত্বিক সংগঠন, বিভিন্ন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, রাজনৈতিক দল, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা একত্রে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এমনকি একযোগে সব ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করার জন্য একাত্মতা ঘোষণা করেছে তারা।

পাশাপাশি তারা বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বিপুল পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করেছে। মামলা থেকে দৃষ্টি অন্য খাতে নিতে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে রোহিঙ্গা শিবিরসহ মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি জোরদার করতে এবং সম্ভাব্য যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯১-৯২ সালে ৩৩ হাজার ৫৪২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তখন তারা ফেরত নেয়নি। ফলে তারা টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থান করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশকিছু চৌকিতে সন্ত্রাসীদের হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

এরপর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৫ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলে রোহিঙ্গা সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আগের যারা ছিল, তাদের নিয়ে বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।