৮৩টি যোগদান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আ’লীগে প্রবেশ করে বিএনপি-জামায়াত

ডেস্ক নিউজ •


►২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত যোগদান অনুষ্ঠানগুলো হয়
►জামায়াত-বিএনপি কর্মীদের মিলিত অনুষ্ঠান হয়েছে ৬২টি
►২১টি যোগদান অনুষ্ঠানের

আওয়ামী লীগে অনপ্রবেশের ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি এ নিয়ে চরম বিরক্ত। এরই মধ্যে তিনি অনুপ্রবেশকারীদের একটি দীর্ঘ তালিকা দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েছেন। দলে এই অনুপ্রবেশের ঘটনা শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে, ঢালাওভাবে হয়েছে ২০১৪ সালের পর এবং সব অনুপ্রবেশই ঘটেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের হাত ধরেই। জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির, বিএনপি, রাজাকার পরিবারের সন্তান, হত্যা মামলার আসামি, নাশকতা মামলার আসামিসহ নানা অপরাধে জড়িত এলাকায় বিতর্কিত লোকদের দলে নিয়েছেন তাঁরা। নির্বিচারে অনুপ্রবেশের কারণে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা।

কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮৩টি যোগদান অনুষ্ঠান হয়েছে। এর মধ্যে ৬২টি যোগদান অনুষ্ঠান ছিল জামায়াত ও বিএনপি কর্মীদের মিলিত আর ২১টি যোগদান অনুষ্ঠান হয়েছে শুধু বিএনপি থেকে আসা নেতাকর্মীদের। দেখা যায়, ৮৩টি যোগদান অনুষ্ঠানের মধ্যে ৬০টি হয়েছে ২০১৪ সালে বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পরে।

উল্লেখযোগ্য যেসব নেতার হাত ধরে এসব যোগদান হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর তিন সদস্য, এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এক মন্ত্রী, বর্তমান এক প্রতিমন্ত্রী রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ, রাজশাহীর পুঠিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহীর বাগমারার সংসদ সদস্য এনামুল হক, জয়পুরহাটের সংসদ সদস্য শামসুল আলম দুদু, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, ঝালকাঠির সংসদ সদস্য বি এইচ হারুন প্রমুখ। তবে অনুপ্রবেশের ঘটনা বেশির ভাগই ঘটেছে সংসদ সদস্যদের হাত ধরে।

ধীরে ধীরে অনুপ্রবেশকারীরা দলের পদ-পদবিও পেয়েছেন। হয়ে উঠেছেন বড় নেতাদের ঘনিষ্ঠ। অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্য বেসাতিও তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। দলে এ ধরনের ঢালাও অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কয়েকবারই দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছেন। এ নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে কালের কণ্ঠে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

তবে এই অনুপ্রেবশকারীদের তালিকা নিয়ে কিছুটা তালগোল পাকিয়েছে। অনুপ্রবেশকারী বলতে আসলে কাদের বোঝানো হয়েছে, তা নিয়ে ধন্দে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। কোন মাপকাঠিতে এই অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। এমনকি তাঁরা এখনো জানেন না, অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায় স্থান পাওয়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তালিকায় দেশের আট বিভাগের জেলাগুলোতে বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে আসা নেতাকর্মীদের নাম রয়েছে। তবে এ তালিকায় নেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রবেশকারী নেতার নাম। স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য, ফ্রিডম পার্টির সাবেক নেতা ছিলেন এমন অনেকের নাম নেই তালিকায়। আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত নন, এমন ব্যক্তির নামও রয়েছে তালিকায়। অসম্পূর্ণ এবং ভুল তথ্যও রয়েছে তালিকায়। ফলে এ তালিকা নিয়ে রাখঢাক করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও। আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ তালিকার বিষয়ে তথ্য জানাতে চাইছেন না।

অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রকাশের পর বিব্রত দু-তিন দশক আগে বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে আসা অনেক নেতা। অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করায় তাঁরা তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কটাক্ষের শিকার হচ্ছেন। দলীয় প্রতিপক্ষরাও এ সুযোগে তাঁদের নানাভাবে নাজেহালের চেষ্টা করছে।