কক্সবাজারে দলীয় মনোনয়ন মূখ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের, বিএনপি নিশ্চুপ

শহীদুল্লাহ কায়সার :

৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলো। এরই মধ্যে সন্নিকটে উপজেলা নির্বাচন। আগামি মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা করা হতে পারে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল। মার্চে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে দলীয় প্রতীকে। নির্দলীয় প্রার্থীরাও নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে প্রার্থী হতে পারবেন। কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশন সচিব এমনই ইঙ্গিত দিলেন।
ফলে এই নির্বাচনের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ‘নৌকা’ প্রতীক পাওয়া মানে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া। এই বিশ^াস থেকেই সংগঠনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌঁড়ঝাপ শুর” করে দিয়েছেন। যেহেতু ঢাকা থেকে ঘোষণা করা হবে দলীয় প্রার্থী। এ কারণে কেন্দ্রের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা। পাশাপাশি জেলার নেতারা যাতে বিগড়ে না যান। সেজন্য তাঁদের সঙ্গেও বজায় রাখছেন সখ্যতা।

এক্ষেত্রে বিএনপি এবং জামায়াতের প্রার্থীরা বর্তমানে নিশ্চুপ। জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী ফলাফলে তাঁরা হতবাক। ঢাকার উপর এখন তাঁদের দৃষ্টি। কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হলে সংগঠন দুইটির প্রার্থীরাও মাঠে নামবেন। তবে, সবকিছুই এখন নির্ভর করছে কেন্দ্রের অর্থাৎ ঢাকার সিদ্ধান্তের উপর। অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে দৈনিক আজকের দেশবিদেশের দুই পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষ পর্ব প্রকাশিত হলো আজ। আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী এবং কুতুবদিয়া উপজেলার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম। প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন দৈনিক আজকের দেশবিদেশে কর্মরত উল্লিখিত উপজেলাগুলোর প্রতিনিধিগণ।

চকরিয়া ঃ ১টি পৌরসভা এবং ১৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চকরিয়া উপজেলা পরিষদ। এই উপজেলার বর্তমান ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন। যাঁদের মধ্যে পুর”ষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮০৫ জন। নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ জন। বিগত উপজেলা নির্বাচনে এই উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাফর আলম। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার-২ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ-সদস্য।

জেলার অন্য উপজেলাগুলোর তুলনায় চকরিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। যাঁদের প্রায় সবাই বর্তমানে আওয়ামী লীগের গুর”ত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে চকরিয়ার সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া, মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মহসীন বাবুল, জেলা পরিষদ সদস্য ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ফয়সাল সিদ্দিকী, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম।
বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সংগঠনটির প্রার্থী হতে পারেন চকরিয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও বিগত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া অথবা উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক আলী।

পেকুয়া ঃ ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয় পেকুয়া উপজেলা পরিষদ। এই উপজেলার বর্তমান ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার ২৭০ জন। যাঁদের মধ্যে পুর”ষ ভোটারের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৬২০ জন। নারী ভোটার রয়েছেন ৫০ হাজার ৬৫০ জন। বিগত উপজেলা নির্বাচনে এই উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাফায়েত আজিজ রাজু। ব্যক্তিগত কারণ প্রদর্শন করে ইতঃপূর্বে তিনি বিএনপি’র পদ ত্যাগ করেন। ফলে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে তাঁর স্বতন্ত্র (নির্দলীয়) প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এস.এম গিয়াস উদ্দিন, জি.এম. আবুল কাশেম।

মহেশখালী ঃ ১টি পৌরসভা এবং ৮ টি ইউনিয়নের নিয়ে গঠিত মহেশখালী উপজেলা। এই উপজেলার বর্তমান ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৬১৬ জন। যাঁদের মধ্যে পুর”ষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৯ জন। নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৬৬৭ জন। বিগত উপজেলা নির্বাচনে এই উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন।
মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিম ছাড়া এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী, মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম, বড় মহেশখালী ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শরীফ বাদশা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ওসমান গণি, কালারমারছড়া ইউপি’র চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি সাজেদুল করিমসহ একঝাঁক আওয়ামী লীগ নেতা।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক এবং হাবিব উল্লাহ্।

কুতুবদিয়া ঃ ৬টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠন করা হয় কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ। এই উপজেলার বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৮৪ হাজার ৪৬৫ জন। যাঁদের মধ্যে পুর”ষ ভোটার রয়েছে ৪৪ হাজার ২৩ জন । নারী ভোটার রয়েছেন ৪০ হাজার ৪৪২ জন। বিগত নির্বাচনে এই উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এটিএম নুর”ল বশর চৌধুরী।

এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান বড়ঘোপ ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর, সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য মাস্টার আহমদ উল্লাহ্, জেলা আওয়ামী লীগের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম কুতুবী, কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়া কুতুবী, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক আহবায়ক মনোয়ার”ল ইসলাম চৌধুরী মুকুল।
নুর”ল বশর চৌধুরী ছাড়াও বিএনপি’র সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, দক্ষিণ ধুর”ং ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদ চৌধুরী।