কুতুপালং শিবিরে গোপন বাজার বসাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠির পরিকল্পনা

দেশ বিদেশ ডেস্ক – আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে নিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম শরনার্থী ক্যাম্প হিসাবে পরিচিত কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে গোপনে একটি বাজার বসানোর কাজ চলছে। নেপথ্যে কাজ করছে রাখাইন থেকে আসা উগ্রপন্থী ‘আলইয়াকিন’ সন্ত্রাসী রোহিঙ্গার দল বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজারটিতে কমপক্ষে দেড় শতাধিক দোকান বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

প্রতিটি দোকান থেকে ১০/১৫ হাজার টাকা করে অগ্রিম নেয়ার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। বাজারটি বসিয়ে ১০/১৫ লাখ টাকার তহবিল যোগাড়ের কথাও ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে চাওর হয়ে পড়েছে।

বিষয়টি নিয়ে গতরাতে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নিকারুজ্জমান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের কতা জানিয়েছেন।

এই তহবিলের টাকা নিয়ে রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যয় করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা গেছে। কুতুপালং গ্রামের জাইন্যা নামের এক ব্যক্তির দখলীয় পাহাড়ী জমিতে এমন বাজারটি বসানোর কথা চলছে। প্রস্তাবিত এ জমিটি কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের ডি-ওয়ান এলাকায়। রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা ‘আলইয়াকিন’ নামে পরিচিত সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারাই মূলত বাজারটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিন্তাভাবনা করে আসছে। এর কয়েকমাস আগে নৌকা মাঠ নামে পরিচিত পাহাড়ী এলাকায়ও একটি বাজার এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্টি স্থাপন করেছে। সেই বাজারটি বসিয়েও কয়েক লাখ টাকার তহবিল তারা করেছে। নৌকা মাঠের বাজার বসিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারা আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ডামাঢোলের সময়েই আরো একটি বাজার বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বাজারটি বসাতে পারলেই আলইয়াকিন রোহিঙ্গা গোষ্ঠির একে একে কয়েকটি পৃথক মিলন ক্ষেত্র স্থাপন করা গেল। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে সচেতন মহল মনে করেন।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়া থেকে সাম্প্রতিক সময়ে আসা রফিক নামের এক ব্যক্তি শিবিরের আলইয়াকিন গোষ্টির লোকজনকে নতুন করে সংঘটিত করছে। মোহাম্মদ রশিদের পুত্র রফিক মালয়েশিয়া থেকে দীর্ঘদিন ধরে আলইয়াকিন গোষ্টিকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছিল। রফিক এর আগে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার কাজে জড়িত ছিল। বাজারটি বসানোর কাজে জড়িত থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে রয়েছে ডাঃ আবদুল্লাহর পুত্র আয়াতুল্লাহ, আলী আহমদের পুত্র নুর মোহাম্মদ, সৈয়দ বৈদ্যের পুত্র মোহাম্মদ নুর এবং উলা মিয়ার পুত্র কালা মিয়া মইজ্যা নামের রোহিঙ্গারা বলে জানা গেছে।

সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, আলইয়াকিন সন্ত্রাসীরা শিবির থেকে বাইরের বাজারে এসে কেনাকাটা করতে পারেনা। তারা বরাবরই আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকতে চায়। তদুপরি বাইরের বাজারে আসলে তারা ধরা খাবে নানা অপকর্মের কারনে। এসব কারনে শিবিরের ভিতরেই তাদের আস্তানাকে নির্ভেজাল করতে তারা তৎপর। বাজারটি বসানো গেলে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হবে পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে কেন এত বড় বাজারটি স্থাপনের কথা চলছে। নেপথ্যে রোহিঙ্গা রফিক ছাড়া স্থানীয়দের কেউ আছেন কিনা ? এ বিষয়টি তদন্ত করা দরকার। দীর্ঘদিন ধরে কুতুপালং গ্রামের একজন সওদাগর পরিচয়ধারী বর্তমান সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ব্যক্তির সাথেই আলইয়াকিন সন্ত্রাসীদের গোপন সর্ম্পকের কথা এলাকায় জানাজানি রয়েছে। এই ব্যক্তির যোগসাজসে বাজারটি বসানো হচ্ছে কিনা ? যেখানে বাজারটি বসানোর কথা সেই বাজারটিও দখলে রয়েছে ওই ব্যক্তির ঘনিষ্টজনের। যেহেতু আসন্ন নির্বাচন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহারের একটা আশংকা বরাবরই থেকেই যাচ্ছে।

তবে স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিবিরের একজন রোহিঙ্গাও বাইরে গিয়ে কোন সন্ত্রাসে জড়িত হতে পারবে না। এমনকি নির্বাচনের সময় রোহিঙ্গাদের বাইরে গিয়ে কোন অপকর্মে বের হবার সুযোগই দেয়া হবেনা।