যেভাবে ক্যাম্প থেকে খদ্দেরের হাতে রোহিঙ্গা নারী

ডেস্ক নিউজ : অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্মী ও খদ্দেরের মধ্যে যোগাযোগ করে দিতে কক্সবাজার জুড়ে ছড়িয়ে আছে কয়েকশ’ দালাল। এইসব দালালদের ফোন নম্বর পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, সিএনজি চালক থেকে শুরু করে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন চায়ের দোকানেও।

লাইট হাউজ নামের এনজিও’র সেল্টার হোমে প্রায়ই দেখা মেলে রোহিঙ্গা যৌনকর্মীর। এদের কেউ এই পেশায় চার থেকে পাঁচ দিন, কেউ পাঁচ মাস। এই নারীরা দিনে মাত্র তিন থেকে পাঁচশ’ টাকা আয় করলেও দালালরা খদ্দেরের কাছ থেকে বুঝে নেন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। মধ্যসত্ত্বভোগী হিসেবে আছে অটোচালকরা। তারা অটো চালানোর ফাঁকে যাত্রীর কাছ থেকে কথা বলে জেনে নেন তার কোন নারী সঙ্গীর প্রয়োজন আছে কিনা। ইতিবাচক সায় পেলেই যোগাযোগ করেন দালালের সঙ্গে। খদ্দের ধরে দিলে তিনি পান দু’শো টাকা।

সেল্টার হোমে থাকা এক রোহিঙ্গা যৌনকর্মী বলেন, কেউ দুইশ’ টাকার বিনিময়ে ডাকে। যেতে হয়। খাবার নেই। থাকার জায়গা নেই। অভাবের কারণে না গিয়ে পারি না।

অপর একজন বলেন, কেউ ইচ্ছা করে এই পেশায় আসে? অভাবে পড়ে বাধ্য হয়ে এইসব কাজ করতে হয়।

এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে চিকিৎসা, গোসলসহ খাবার পান নিষিদ্ধ পথে পা বাড়ানো এসব রোহিঙ্গা নারীরা। দিনে তাদের ওই ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। তবে রাত হলেই দালালদের সহায়তায় তারা ছড়িয়ে পড়েন পর্যটন নগরীর বিভিন্ন জায়গায়।

শরণার্থী নারীদের দিয়ে যারা ব্যবসা করান এমন একজন পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান কীভাবে ক্যাম্প থেকে খদ্দেরের হাতে আসে রোহিঙ্গা নারী।

নিজ বাসায় বসে ওই ব্যক্তি বলেন, ক্যাম্পের মাঝি আর পুরাতন রোহিঙ্গারা দুই-এক হাজার টাকার লোভে রোহিঙ্গা নারীদের দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। হোটেল মালিক, হোটেল বয় সবাই এর সঙ্গে জড়িত। কটেজ বা বড় বড় ১০ তলা বিল্ডিং, মোটামুটি কোন হোটেল বাদ নেই। ফাইভ স্টার হোটেলেও ওঠে। বিদেশেও পাচার করা হয় রোহিঙ্গা মেয়েদের। আমার জানা মতে ৬/৭ জন রোহিঙ্গা নারী বিদেশে গেছে। আমার বাসা থেকে গেছে তিনজন। তাদের একজন ফেরত এসেছে।

কক্সবাজারে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা দু’টি এনজিও জানায় দালাল চক্রের কথা। নোঙ্গর’র নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, দালালদের সঙ্গে সেই রোহিঙ্গাদের একটা সম্পর্ক বিদ্যমান আছে। তারা তাদেরকে সহজে এ ধরণের পেশাগুলোতে নিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করতে পারছে।

অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, এখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটা বড় ভূমিকা রাখতে হবে। এটা ঠিক, হঠাৎ করে এত মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন কাজ। কিন্তু, এটা বলে তো আমরা পার পেতে পারব না। আমাদেরকে এখানে শক্ত হাতে ধরতে হবে।

প্রায় সাড়ে চারশ’র বেশি হোটেল ও কটেজে পরিপূর্ণ পর্যটন শহর কক্সবাজারের রাত এবং দিন যতখানি রঙিন তার চেয়ে অন্ধকার এক জগতে বসবাস করছে এখানকার অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী। তাদেরকে এখান থেকে উত্তরণ করা না গেলে ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শিবিরটি কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত কুতুপালংয়ে। এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ১৯৯২ সালে স্থাপিত এ শিবিরের প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা কিশোরী ও নারী যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নতুন ছয় লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এবার তাদের মধ্য থেকে আরও ১০ হাজার কিশোরী ও নারী এ পেশায় যুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।