সূরা আস সাবা (অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তু)

নামকরণ

১৫ আয়াতের বাক্য (………………..) থেকে গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, এটি এমন একটি সূরা যেখানে সাবা এর কথা বলা হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময় কাল-

কোন নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত থেকে এর নাযিলের সঠিক সময়-কাল জানা যায় না। তবে বর্ণনাধারা থেকে অনুভূত হয়, সেটি ছিল মক্কার মাঝামাঝি যুগ অথবা প্রাথমিক যুগ। যদি মাঝামাঝি যুগ হয়ে থাকে তাহলে সম্ভবত সেটি ছিল তার একেবারে প্রথম দিককার সময়। তখনো পর্যন্ত জুলুম নিপীড়নের তীব্রতা দেখা দেয়নি এবং তখনো কেবলমাত্র ঠাট্টা, তামাশা, বিদ্রূপ , গুজব ছড়ানো এবং মিথ্যা অপবাদ ও প্ররোচনা দেবার মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনকে দমিত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছিল।

বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য-

এ সূরায় কাফেরদের এমন সব আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে যা তারা নবী (সা) মের তাওহীদ ও আখেরাতের দাওয়াতের এবং তার নবুওয়াতের বিরুদ্ধে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ ও অর্থহীন অপবাদের আকারে পেশ করতো। কোথাও এ আপত্তি গুলো উদ্ধৃত করে তার জবাব দেয়া হয়েছে আবার কোথাও সেগুলো কোন আপত্তির জবাব তা স্বতস্ফূর্তভাবে প্রকাশ হয়ে গেছে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে জবাব গুলো দেয়া হয়েছে বুঝাবার পদ্ধতিতে এবং আলোচনার মাধ্যমে স্বরণ করিয়ে দেবার ও যুক্তিপ্রদর্শনের কায়দায়। কিন্তু কোথাও কোথাও কাফেরদেরকে তাদের হঠকারিতা খারাপ পরিণতির ভয় দেখানো হয়েছে। এ প্রসংগে হযরত দাউদ (আ), হযরত সুলাইমান (আ) ও সাবা জাতির কাহিনী এ উদ্দেশ্যে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তোমাদের সামনে ইতিহাসের এ দুটি দৃষ্টান্তই রয়েছে- একদিকে রয়েছে হযরত দাউদ (আ) ও হযরত সুলাইমান (আ)। আল্লাহ তাদেরকে দান করেছিলেন বিপুল শক্তি এবং এমন গৌরব দীপ্ত শান-শওকত, যা ইতিপূর্বে খুব কম লোককে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব কিছু পাওয়ার পরও তারা অহংকার ও আত্মম্ভরিতায় লিপ্ত হননি। বরং নিজের রবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পরিবর্তে তার কৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত হন। অন্য দিকে ছিল সাবা জাতি। যখন আল্লাহ তাদেরকে নিয়ামত দান করলেন, তারা অহমিকায় স্ফীত হয়ে উঠলো এবং শেষে এমনভাবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো যে, এখন কেবল তাদের কাহিনীই দুনিয়ার বুকে রয়ে গেছে। এ দুটি দৃষ্টান্ত সামনে রেখে স্বয়ং তোমাদেরকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে যে, তাওহীদ ও আখেরাতে বিশ্বাস এবং নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রবণতার ভিত্তিতে যে জীবন পড়ে ওঠে তা বেশী ভালো, না সেই জীবন বেশী ভালো যা গড়ে ওঠে কুফর ও শিরক এবং আখেরাত অস্বীকার ও বৈষয়িক স্বার্থ পূজার ভিত্তিতে।