কক্সবাজারে আইজিপি’র অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

বিশেষ প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোঃ জাবেদ পাটোয়ারি কক্সবাজার সৈকত তীরে রয়েছেন একদম সাধারণ্যে। তিনি পুলিশের মত একটি বাহিনীর প্রধান হয়েও সাধারণ মানের একটি গেষ্ট হাউজের কক্ষে অবস্থান করছেন। আবার তেমনি সাধারণ মানের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা নিয়েও চলছে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা।

বিশেষ করে পুলিশের নি¤œ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারির মুখে মুখেই আইজিপি’র এরকম সাধারণ্যে অবস্থানের বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। বলাবলি হচ্ছে-একজন আইজিপিতেই পুলিশ বাহিনীর ভাবমুর্তি উজ্জল হতে পারে।
আগামীকাল শনিবার টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের আতœসমর্পণ অনুষ্টানের তদারকি করতেই পুলিশের আইজিপি গতকাল বৃহষ্পতিবার কক্সবাজার এসে পৌঁছেন। কক্সবাজার সাগর পাড়ে রয়েছে কমপক্ষে আধা ডজন তারকামানের হোটেল। রয়েছে অনেক উন্নত মানের সরকারি-বেসরকারি সার্কিট হাউজ থেকে শুরু করে গেষ্ট হাউজও। পুলিশের আইজিপি’র জন্য তারকা মানের হোটেলে অবস্থানের ব্যবস্থা থাকলেও তিনি এসব সুযোগ-সুবিধা না নিয়ে সাধারণ মানের গেষ্ট হাউজে অবস্থান করছেন।

কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কামরুল আজম বলেন-‘আমি পুলিশের একজন ছোট কর্মকর্তা হিসাবে অবাক হচ্ছি পুলিশ বাহিনীর একজন প্রধান হয়েও আইজিপি স্যার সাগর পাড়ের আধুনিক সুযোগ সুবিধার হোটেলে থাকছেন না। তিনি থাকছেন পুলিশ ম্যাচের একটি অতি সাধারণ মানের কক্ষে।’ পরিদর্শক কামরুল আজম আইজিপি’র অবস্থানের জন্য পুলিশ ম্যাচটির দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তিনি বলেন, কক্সবাজার দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হবার সুবাধে এখানে সরকারি-বেসরকারি লোকজন আসেন প্রতিনিয়ত। অনেকেরই থাকে বিলাসী চাহিদা। কিন্তু এক্ষেত্রে পুলিশের মহাপরিদর্শকের সাধারণ্যে অবস্থান যেন অন্যরকমের।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়–য়া এসব বিষয়ে বলেন-‘ আমাদের দেশে পুলিশই যেহেতু নানা কাজে জড়িত থাকে সেহেতু পুলিশ নিয়েই সবচেয়ে বেশী আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে। আর এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর প্রধান হিসাবে আইজিপি মহোদয়ের এরকম সাধারণ মানের জীবন-যাপন দেশব্যাপি নিশ্চয়ই গোটা পুলিশ বাহিনীরই ভাবমুর্তি উজ্জল করবে।’

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন-‘শুনেছি প্রথম তত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ স্বপরিবারে কক্সবাজারে এসেছিলেন। তিনি উঠেছিলেন স্থানীয় হিলটপ সার্কিট হাউজে। এখানে (সার্কিট হাউজ) তাঁর জন্য ভাল খাবারের ব্যবস্থাও হয়েছিল যথারীতি। কিন্তু তিনি সেই খাবার খেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ ম্যাচের যে কক্ষে আইজিপি অবস্থান করছেন সেটির ভাড়া মাত্র ৫০০ টাকা। অথচ সাগর পাড়ের একটি তারকামানের হোটেলের প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ক্ষেত্র বিশেষে ১০/১৫ হাজার টাকা।
সেই সময় কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউজের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বর্তমান জেলা নাজির স্বপন কান্তি পাল।

তিনি গতকাল বলেন-‘বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ তখন সার্কিট হাউজে নিজের টাকা দিয়েই বাজার করিয়ে খেয়েছিলেন। আমার এখনো মনে পড়ে তিনি সামুদ্রিক ছোট মাছ, ডাল এবং আলু ভর্তার মেন্যু রেখেছিলেন খাবারে।’ জেলা প্রশাসনের এই দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারি স্বপন কান্তি পাল আরো বলেন, মনে থাকার মত দেশে সৎ এবং মহৎ ব্যক্তি এখনো ফুরিয়ে যাননি। এসব মানুষগুলোই সমাজে সৃষ্টি করে যান অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।