উখিয়ায় অবৈধ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নাম্বার বিহীন ছয়শো ডাম্পার!

মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তফা •

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে সড়কে অবাধে চলছে কাগজপত্রবিহীন মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেস বিহীন ৬০০ ডাম্পার ও মিনি ট্রাক। অবৈধ ও অপরাধমূলক কাজে এসব অনিবন্ধিত ‘ডাম্প ট্রাক’ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেবল পাহাড় কাটা ও বালু তোলার কাজে নয়, গরু চুরি ও ইয়াবা পরিবহনেও ব্যবহার হচ্ছে নম্বরবিহীন এসব ডাম্প ট্রাকগুলো।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, পালংখালী ৬০, থাইংখালি ১০৫, বালুখালী কুতুপালং-১২৫, উখিয়া সদর ৫৬, ভালুকিয়া ৬০, কোটবাজার ৬৩, জালিয়াপালং ৪৫, মরিচ্যা ৬৫ ও পাতা বাড়ি ২০ টি ডাম্পার ও মিনি ট্রাক আছে। কয়েকটি ছাড়া বাকি ডাম্পার ও মিনি ট্রাক অবৈধ।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইয়াবা পাচার, চুরি ডাকাতি ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহার হচ্ছে ট্রাকগুলো।

কুতুপালংয়ের ইমরান বলছেন, নম্বরবিহীন এসব ড্রাম ট্রাকের মালিকেরাই মূলত পাহাড় কাটা, বালু তোলা, কাঠ পাচারসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত।

তথ্য মতে, চলতি মাসে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে ৩ মাসের ব্যবধানে ২০টি বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েকদিনে কুতুপালং ও রাজাপালং পৃথকভাবে ডাম্পার গাড়ি চাপা দিয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয় এবং বেশ কয়েকটি সিএনজি গাড়িও ভাঙচুর হয়। এরপরেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশীরভাগ চালক অল্পবয়স্ক কিশোর যুবক, যাদের সিংহভাগেরই নেই কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স। ফলে বিভিন্ন সময় ঘটছে দূর্ঘটনা। মহাসড়কে নাম্বার ও ফিটনেসবিহীন ডাম্পার চলাচল নিষিদ্ধ থাকা সত্তেও এসব যান মহাসড়কে সর্বদাই যাতায়াত করছে। এসব ডাম্পার গুলো মহাসড়কে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গতির প্রতিযোগীতা শুরু করে দেয়। ট্রাফিক সিগনাল না মেনে যেখানে সেখানে থামে, যেখানে সেখানে মালামাল উঠানামা করে ও বেপরোয়া ওভারটেক করার ফলে বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনা।

চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র উখিয়ার খয়রাতি পাড়ার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ডাম্পার যখন কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে উঠে তখন হাইওয়ে পুলিশের ভয়ে অবৈধ ডাম্পার ও মিনি ট্রাকগুলো সর্বোচ্চ গতিতে চালায় যাতে তারা মামলা থেকে বেচে যায়। এর ফলে সড়ক দূর্ঘটনা সম্মুখীন হয়। অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ডাম্পারগুলো আইনের আওতায় আনা উচিৎ। অন্যতায় সড়ক দূর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব না।

বিআরটিএ এর তথ্য অনুযায়ী কক্সবাজার জেলায় মোট ডাম্পারের সংখ্যা ২ হাজার, রেজিষ্ট্রেশন নেই ১ হাজার ৮ শত ৯৫টির, রেজিষ্ট্রেশন আছে ১ শত ৫টির তার মধ্যে নবায়ন করে নাই ৮০টি, মোট বৈধ ডাম্পার আছে ২৫ টি। এসব যানবাহন আটক ও কাগজপত্র পরীক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগ খুব একটা দৃশ্যমান নয়।

ফিটনেসবিহীন এসব ডাম্পার চলাচলের কারণে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। হতাহতের ঘটনাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মেয়াদোত্তীর্ণ ও লক্কড় ঝক্কড় মার্কা ডাম্পার চলাচলের কারণে পরিবেশ দূষণ ও সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ডাম্পার মালিক ও ড্রাইভারদের দাবি, তারা মাসিক চাঁদা দিয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ ম্যানেজ করে সড়কে গাড়ি চলাচল অব্যাহত রেখেছে।

অবৈধ ডাম্পার চলাচলের ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহাপুরি হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা শাফায়েত হোসেন বলেন, আমি উখিয়াতে আসার পার প্রায় ৩০ টি ডাম্পারকে মামলা দিয়েছি। এই অবৈধ ডাম্পারের পাশাপাশি অবৈধ বিভিন্ন গাড়িকে আমরা বিভিন্ন সময় মামলা দিয়ে থাকি। তবে ডাম্পারের বিষয়টা খতিয়ে দেখব এবং অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, উপজেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন সময় জরিমানা করি। অবৈধ ডাম্পারের বিরুদ্ধে অভিযান অভ্যাহত রয়েছে।