আজ থেকে ২২দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ: হতাশ জেলেরা

সাইফুল ইসলাম • কক্সবাজার জার্নাল

কক্সবাজারে সমুদ্র উপকূলে আজ ৯ অক্টোবর থেকে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ২২ দিন। এই দিনে আয় রোজগার বন্ধ থাকবে জেলেদের। তাই দিশেহারা জেলার লাখো জেলে পরিবার। এমনকি জেলেপল্লিতে হাহাকার অবস্থা সৃষ্টি হবে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা যেতে না যেতেই হঠাৎ আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। অথচ জেলে পরিবারের আয়ের উৎস মাত্র একটি। মাছ ধরা বন্ধ হলেই জেলেরা কষ্টের মধ্যে পড়ে যায়। এই অবস্থায় তাঁদের সহায়তা দরকার হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রকৃত জেলে ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যারা নিবন্ধিত জেলে রয়েছে তাদের বেশির ভাগই সাগরে যায়নি এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী জেলেদের।

ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, মাছ ধরার মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময়টাতে সরকারের বিশেষ ভাতা পায় নিবন্ধিত জেলেরা। তবে নিবন্ধিতদের মধ্যে কিছু সংখ্যক জেলেরা ভাতা পেয়ে থাকলেও প্রায় ৬ মাস ধরে সেই ভাতা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে থাকে। তখন নুন আনতে পান্তা পুরাচ্ছে হাজারো জেলের ঘরে।

ভাতা বঞ্চিত জেলেদের অভিযোগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কিছু নেতাদের ইচ্ছেমত মৎস্য কর্মকর্তারা এই কার্ড বিতরণ করে থাকেন। আর কার্ডের পরিমাণও পর্যাপ্ত না হওয়ায় বেশিরভাগ জেলে এর আওতার বাইরে রয়েছে। যাঁরা বর্তমানে নিবন্ধিত তালিকায় রয়েছে তাঁরা নিয়মিত ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় তাদের।

এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও সংস্থা থেকে লোন নিয়ে সেই লোন ঠিকমতো পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই এখন দেউলিয়া হয়ে পথে বসতে দেখা গেছে।

ভারুয়াখালীর বাসিন্দা শফিউল আলম প্রকাশ (কালাপুতু) নামে এক জেলে বলেন, প্রকৃত জেলেরা ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভারুয়াখালী ইউনিয়নে প্রায় ২০০ শতের অধিক জেলে আছে। নিবন্ধিত হয়েছে ৫০-৬০ জনের মতো। যাঁরা নিবন্ধনের আওতায় আছে তাদের অধিকাংশই ভাতা থেকে বঞ্চিত। নিবন্ধিত জেলে যারা ভাতা হিসেবে ২০ কেজি চাল পেলেও নিজেদের সংসার আর শ্রমিকদের দিন চলে খুব কষ্টের। শুধু চাল খেয়ে কি আর জীবন চলে ?, জেলেরা এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন মাঝে মাঝে।

মৎস্য শ্রমিক মো. রফিক বলেন, জেলেরা অনুমতি না পেলে নৌকা সাগরে নামতে পারে না। আমরাও কাজ পাইনা। এই সময়গুলো মালিকের মুখের দিকে তাকিয়েই কোন রকম দিন চলে। জেলেদের পাশাপাশি মৎস্য শ্রমিকদের জন্য ভাতার দাবি জানান তিনি।

এদিকে আজ ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ৬ অক্টোবর (রোববার) মন্ত্রণালয় থেকে জারি হওয়া এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে। এই সময়ে ইলিশের আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ।

এ বিষয়ে আজ সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, এ সময়ে মা ইলিশ ডিম পাড়ে। এ সময়ে ডিম পাড়ে ৮০ শতাংশ ইলিশ। আর এই ডিম পাড়ে মূলত মিঠা পানিতে। তাই আশ্বিনের পূর্ণিমার চার দিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮ দিন মোট ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, নদীর মোহনাসহ যেসব জেলা ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়, সেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে।

আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধ থাকার সময় যেসব জেলার জেলেরা মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল, তাঁদের খাদ্য সহযোগিতা দেওয়া হবে। এ সময়ে মাছ পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ থাকবে। এটা তখন বেআইনি হবে।

জেলেদের খাদ্য সহায়তায় দুর্নীতি লক্ষ করা যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি ঢাকা, চট্টগ্রামে চ্যালেঞ্জ করছি। আপনারা নির্দিষ্ট করে দেখান। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্যরা তৎপর ছিলেন। স্থানীয় প্রতিনিধিসহ জেলে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চাল বিতরণ করা হয়েছে।’

প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান আরও বলেন, ‘আমরাও এত শক্তিশালী ছিলাম না। এখন আমাদের জরিপ জাহাজসহ অনেক জাহাজ রয়েছে, হেলিকপ্টার রয়েছে, রাডার রয়েছে- এগুলো আমরা সব সময় ব্যবহার করি। আমাদের দেশে যখন মাছ ধরা বন্ধ থাকে, তখন কোনো মাছ ধরা ট্রলার আমাদের দেশে ঢুকতে পারে না।’ আশরাফ আলী খান বলেন, ‘আমাদের ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এর ফলে আমাদের মাছের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। বিশেষ করে ইলিশ মাছের যে আকাল ছিল, সেটা কমেছে। ইলিশ মাছে হাটবাজার সয়লাব হয়ে গেছে। সমুদ্রসহ নদীর মোহনাগুলোতে মাছের বিচরণ বেড়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যেই কক্সবাজারের জেলেদের জন্য ২১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন। কিন্তু সব নিবন্ধিত জেলারই এসব ভাতা পাবে না। যারা অতিরিক্ত দরিদ্র তাকে এই ভাতা দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের স্বার্থেই আমাদেরকে এই নিষেধাজ্ঞা মেনা চলা উচিত।