উখিয়ায় কাস্টমস নিলাম বাণিজ্য পিয়ন আবুলের দখলে!

 

  • * দুর্নীতির দায়ে পিয়নের কর্মচারী থেকে চাকরিচ্যুত

  • * তারপরও নিলাম বাণিজ্য তার নিয়ন্ত্রণে

  • * যাবতীয় দুর্নীতি আবুলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়

এম ফেরদৌস, উখিয়া :


উখিয়া কাস্টমসসে নিলাম বাণিজ্যসহ বহু অপকর্মে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে রাম-রাজত্ব চলাচ্ছে পিয়নের দায়িত্ব থেকে দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত হওয়া আবুল হোসেন ও তার সিন্ডিকেটরা।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, উখিয়ারঘাট কাস্টমস কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে পিয়ন আবুল হোসেন ও তার সহযোগীরা। কাস্টমসের যাবতীয় নিলাম বাণিজ্য ও দুর্নীতি-অপকর্ম ঢাকতে কাস্টমস কর্মকর্তা সাবেক এই পিয়নকেই ব্যবহার করছেন। সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কাস্টমসসের গোদামে জমাপড়া মালামাল দায়িত্বরত কর্মকর্তা সু-কৌশলে সাবেক পিয়ন আবুল হোসেনের মাধ্যমে নিলাম ডাককারী সিন্ডিকেট তৈরি করে লোক দেখানো নিলাম সাজিয়ে ডাককারী হিসাবে তার সিন্ডিকেটদের হাতেই তুলে দিচ্ছে।
নিলাম নিষ্পত্তি সরকারি স্থায়ী আদেশ ৯৩/২০১৯ (৭) নিষ্পত্তিযোগ্য নিলাম পদ্ধতি (অ) অনুসারে চতুরদিকে মিনিমাম ২ কিলোমিটার মাইকিং করতে হবে। যাতে নিলাম বানিজ্য প্রকাশ্যে হয় আর সময়মত সকলে অংশ নিতে পারে ।

উখিয়ার এই কাস্টমস কর্মকর্তা এসবের তোয়াক্কা করেন না। তাদের সিন্ডিকেট দিয়ে গোপনে নিলাম কারসাজি শেষ করেন। সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারেন না নিলামের প্রতিযোগিতামূলক ডাকমারীরা। এসব নিলামে সকলেই অংগ্রহন করার অধিকার থাকলেও কাস্টমস কর্মকর্তার চতুরতায় নিলামে যেই কেউ অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাই না। ফলে সাজানো নিলামের কারসাজিতে সরকার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

জানা যায়, বছরখানেক আগে পিয়ন আবুল হোসেন কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে চোরাইপথে আসা ১৮ টি স্বর্ণের বার জব্দ করে ৩ রোহিঙ্গা থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। তার এসব অপকর্ম ও দুর্নীতি নিয়ে জনকন্ঠে প্রকাশ হলে তৎকালীন দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার জোনের কাস্টমস কর্মকর্তা শওকত আলী আবুল হোসেনকে পিয়নের দায়িত্ব থেকে চাকরিচ্যুত করেন।

বর্তমানে সেই আবুল হোসেন আবারো কাস্টমসসের কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে নানান অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। নিলাম বাণিজ্যে সম্পুর্ন তার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।এছাড়া কাস্টমসে যত দুর্নীতি অনিয়ম চলে সর্বত্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই চাকরিচ্যুত কর্মচারী পিয়ন আবুল হোসেন। এসব আশ্রয়-প্রশ্রয়ের মাস্টারমাইন্ড হিসাবে রয়েছে দায়িত্বরত কাস্টমস কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার।

স্থানীয়রা বলছে, আবুল হোসেন কাস্টমসসে চাকরিচ্যুত হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তার অবৈধ টাকায় কক্সবাজার-রামুতে বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য শুরু করেন। সেখানে তেমন লাভমান না হওয়াতে পুনরায় কাস্টমসে এসে আবার বেপোরোয়া হয়ে গেছে। কাস্টমসের খুটিনাটি সবকিছু জানা থাকায় আবুল হোসেন সকল কর্মকর্তাদের বশ করে নিয়ে তার জিম্মায় নিতে পারেন। তাছাড়া সকলকে লাভমান করার জন্য আবুল হোসেন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। সরকারি নীতিমালা মেনে চলা বা সরকার লাভমান হচ্ছে কি না সেটা কাস্টমস কর্মকর্তার দেখার বিষয় নই। যার কারণে আবুল হোসেনের মাধ্যমে কাস্টমসের দায়িত্বরত সকলেই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।

এসব বিষয়ে উখিয়া কাস্টমস কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার বলেন, আবুক হোসেন কাস্টমসের কেউ নই। সে কোন সময় এখানকার কোন স্টাফ বা কর্মচারি ছিল না। কাস্টমসের নিয়ম অনুযায়ী নিলাম দিতে গেলে সকল অংশগ্রহণকারীর ন্যায় আবুল হোসেন নামে ব্যাক্তিটিও অংশ নিচ্ছে। নিলাম তার সিন্ডিকেট বা তার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা আমার জানা নেই। আমি সরকারি নীতিমালা মেনেই নিলাম দিচ্ছি।

অভিযুক্ত আবুল হোসেন বলছে, আমার বাড়ি কাস্টমসের পাশে হওয়ায় সেখানে থাকতাম। তাছাড়া সকলের মত আমিও নিলামে যায় সেখানে আমার কোন সিন্ডিকেট নেই।