উখিয়ায় পারিবারিক পুষ্টি সবজি বাগানে বদলে যাচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান!

কক্সবাজার জার্নাল প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের উখিয়ায় পারিবারিক পুষ্টি সবজি বাগানে বদলে যাচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান। অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ও ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষকরা বাড়ির উঠান ও বাড়ির পাশের খালি জায়গায় সবজি চাষে ঝুঁকছেন। এতে করে একদিকে যোগান দিচ্ছে পারিবারিক পুষ্টির, আরেক দিকে সবজি বিক্রি করে সচ্ছল হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করে উখিয়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রর্দশনী পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জায়গায় করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, প্রত্যেক পরিবারকে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের সবজির বীজ, সার, ফলের চারা, নেট, বীজ সংরক্ষণের পাত্র, বাগানে পানি দেয়ার ঝাঝরিসহ অন্যান্য সকল উপকরণ বিনামূল্যে দেয়া হয়েছিল। পরিত্যক্ত জমিতে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতে মূলা, লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক, লাউ, পালংশাক, শিম, ডাটা, ধনিয়া ও কলমি শাকসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করছেন। সরকারের বিনামূল্যে সবজি বীজ পেয়ে কৃষকরা বাড়ির উঠান ও বাড়ির পাশের খালি জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করে পরিবারের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পরও বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছেন।

তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে উখিয়া উপজেলায় ৯৬ জন কৃষক-কৃষাণীদের মাঝে পারিবারিক পুষ্টি বাগান পুনঃস্থাপনের জন্য বিভিন্ন জাতের সবজির বীজ, ফলজ চারা, বাগানের আঙ্গিনায় বেড়া দেয়ার জন্য নেট এবং সাইনবোর্ড উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে সোমবার (২৫ শে মার্চ) বেলা ১১ টার দিকে উপজেলা কৃষি অফিস চত্বরে এসব বিতরণ করা হয়।


কৃষক আবদুল গফুর বলেন, কৃষি অফিস থেকে সার, নেট, ফলের চারা ও ৬ প্রকারের সবজি বীজ দেয়া হয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি অফিসারদের পরামর্শে আমি বাড়ির উঠানে ফাঁকা জায়গায় এ বাগান তৈরি করেছি। আমি এ পুষ্টি বাগান থেকে আমার নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে আশেপাশের মানুষকে শাক-সবজি বিতরণ করেছি। এরপরও বাকি সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকাও আয় করেছি।

কৃষাণী নাসিমা আক্তার জেনী বলেন, আমার বাড়ির পাশে কিছু জায়গা অনেক দিন যাবৎ পতিত ছিল। সেই পতিত জায়গায় আমি কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সবজির বাগান করেছি। এ বাগান করার পর থেকে আমি বাজার থেকে কোন শাক সবজি কিনতে হয় নাই। বরং অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করেছি। আমার সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। আমার বাড়ির আশেপাশের লোকজনও বাড়িতে এসে সবজি কিনে নিয়ে যায়।

উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিজাম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যারা আছি তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাছি। সেই লক্ষ্যে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তোলা শুরু করেছি। যাদের বাড়িতে এক শতাংশ জমি খালি আছে। সেখানে আমরা বাগান স্থাপন করে দিচ্ছি। এছাড়া অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় আমরা কৃষকদেরকে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজির বীজ ও ফলের গাছ বিতরণ করেছি এবং তাদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

এতে কৃষকের নিজের যে পুষ্টি দরকার তাদের বাগানে উৎপাদন করে সে পুষ্টি পাচ্ছেন। সেই সাথে অধিক যে শাক-সবজি উৎপাদন করছে সেটা বিক্রি করে বেশ কিছু মুনাফাও পাচ্ছেন। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের পাছে সব সময় রয়েছি।

কৃষিবিদ নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, আমরা উখিয়া ৫টি ইউনিয়নে সকল পতিত জমিতে বাগান স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মাঠ পযার্য়ের উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা কৃষদের এ বাগান স্থাপন ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সব সময় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা কৃষি- সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, বিভিন্ন ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার, কৃষক-কৃষাণী ও গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।