এক বিয়ের মঞ্চ থেকে নতুন জীবনে ১৭ যুগল

রহিম রুমন :

এক সাথে বিয়ের ব্যবস্থা হলো এতিম ও দুঃস্থ ১৭ জোড়া বর কনের। জমকালো আয়োজনে পান্থপথের সামারাই কনভেনশন সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন করে ভোলা জেলা সমিতি।

এর আগেও ২০১৯ সালে একসাথে ১২ জন বর-কনের বিয়ের আয়োজন করে এই সংগঠন। সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানোয় তাদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন ভোলার বিশিষ্টজনেরা।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে এই বিয়ের আয়োজন নাগরিক জীবনের ছিলো অন্যরকম একটি অনুষ্ঠান। যেখানে কিছু মানুষের খুশির পাশাপাশি তাদের স্বপ্নের ডালপালাও মেলেছে।

ছোটবেলাতেই বাবা-মা হারানো কিংবা শৈশব থেকে অভাবী সংসারে বেড়ে ওঠা তরুণের সংখ্যা এই দেশে নেহাত কম নয়। কিন্তু দারিদ্র তো মানুষের স্বপ্নকে আটকে রাখতে পারে না।

আর দশটা মানুষের মতো তাদেরও স্বপ্ন ছিলো সুখের একটা সংসার হবে। অবশেষে সেই স্বপ্ন ধরা দিয়েছে বাস্তবে। শৈশব-কৈশরের আঙ্গিনা ছেড়ে নতুন জীবন শুরু ৩৪ জন মানুষ।

এমনি ১৭ জোড়া বর-কনেকে খুঁজে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছে ঢাকাস্থ ভোলা জেলা সমিতি। বর-কনে এবং বিয়ের উদ্যোক্তা সবাই ভোলা জেলার। তাই নিজ জেলার অভিভাবকদের এমন উদ্যোগে অভিভূত বর-কনেরা।

ভোলা সমিতি কনের জন্য নাক ফুল, গয়না, শাড়ি, জুতা, হাতের ব্যাগ থেকে শুরু করে সবকিছুই কিনেছে। বরদের জন্য শেরোয়ানি, পায়জামাসহ যা কিছু লেগেছে, তাও কেনা হয়েছে।

২০১৯ সালে এমনই এক উদ্যোগে ১২ জোড়া বর কনের বিয়ে দেয় একই সংগঠন। দুই বছর পর এবার একই রকম আয়োজনে আমন্ত্রিত তারাও। তাদের কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে শিশু।

ফুল, লাল ও হলুদ রংয়ের কাপড় দিয়ে মঞ্চ সাজানো হয়। দুপুর দু’টার দিকে ৩৪ জন বর-কনে সানাই-বাধ্য বাজিয়ে ঘোড়ায় চড়ে আসেন বিয়ের স্থলে।

কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করেই একই মঞ্চে ১৭ জন কনে, ১৭ জন বর বসলেন। একই রকম সাজ। মেহমান এসেছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক।

খাবারের আয়োজনের মধ্যে ছিল পোলাও, রোস্ট, রেজালা, সবজি, বোরহানি, জর্দা। খাবার টেবিলগুলোতে ভোলা সমিতির কর্মকর্তারা নিজেরাই তদারকি করছিলেন।

তারা বলেছেন, এমন উদ্যোগের সাথে থাকতে পেরে তারাও তৃপ্ত। তারা বলেন, নিজের ছেলে-মেয়ের মতোই ওদের মহা ধুমধামে বিয়ে দিয়েছি। তাদের যেন মনে না হয়, এতিম বলে যেনতেন-ভাবে ওদের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।

শুধু বিয়েই নয়। ১৭ জোড়া নব দম্পতির জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা, ৩০ হাজার টাকার গয়না ও একটি করে ডিনার সেট উপহার দেয়া হয়েছে।

ভোলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদুল হক মুকুল বলেন, ‘যাদের বিয়ে দিয়েছি, তারা আমাদের ছেলে-মেয়ে। তাই কেনাকাটাসহ সবকিছু যাতে নিখুঁত হয়, তা দেখা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রামে কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা-মায়ের কষ্টের শেষ নেই। এতিম হলে তো বিয়েই হয় না। আবার যৌতুকের কারণেও অনেকের বিয়ে হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এমন কন্যাদের বিয়ে দিতে সবার সহায়তার হাত বাড়ানো উচিত।

আর ঢাকাস্থ ভোলা সমিতির সভাপতি মো. মাকসুদ হেলালী বলেন, ২০১৯ সালেও তারা ২৪ জন ছেলে-মেয়েকে একসঙ্গে যৌতুকবিহীন বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের পর কর্মসংস্থানের জন্য তাদের অর্থনৈতিক সহায়তাও দেওয়া হয়। বিয়ের পরও এই মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়।