কক্সবাজারের ময়ূরের পেখম খুলে নাচের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া :

“মনের ময়ূর আজি নাচিছে অঙ্গনে, প্রসারিত পেখমের রঙীন বাহার, বর্ষিছে অঝোর ধারা মন মধুবনে” কবি সুদীপ্ত তন্তুবায় (নীল) তার লেখা ‘মনের ময়ূর’ কবিতায় ময়ূরের পেখম কুলে নাচকে এভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রচলন রয়েছে ময়ূর শুধু বর্ষাকালে পেখম মেলে নাচে।

তবে, প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে মুলত পুরুষ ময়ূর মহিলা ময়ূরদের আকৃষ্ট করার জন্য গ্রীষ্ম মৌসুমে পেখম কুলে নাচতে থাকে। মনে যখন দোলা লাগে তখন কি বর্ষা কি গ্রীষ্ম তা কি আর মনে থাকে ! গ্রীষ্মের প্রচন্ড করতাপে এমনই এক ময়ূরের পেখম কুলে নাচ দেখে উচ্ছাসিত হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ঢুুকে হাতের বাম পাশে কয়েক গজ হেঁটে গেলেই দেখা মিলবে ময়ূরের বেষ্টনি। এমন সময় দেখা মিলে একটি ময়ূর পেখম কুলে আপন মনে নাচানাচি করছে। তা দেখে পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা মোবাইলে ছবি ধারণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

কারণ ময়ূরের পেখম কুলে নাচানাচির দৃশ্যতো আর সবসময় দেখার সৌভাগ্য হয়না। এই বেষ্টনিতে আরও অনেক ময়ূর রয়েছে। তবে, দল ছেড়ে এসে হঠাৎ কি মনে করে একটি ময়ূর পেখম কুলে নৃত্য করছে তা কারো অজানা।

চট্টগ্রাম থেকে পার্কে ঘুরতে এসেছেন মনিকা বিশ্বাস নামের এক দর্শনার্থী। তিনি বলেন, চকরিয়ায় আমার আত্মীয় রয়েছে। আমার স্বামী, সন্তান ও বোনসহ বেড়াতে এসেছি এখানে। সেসুবাদে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আসা। এখানে এসে অনেক পশু-পাখি দেখেছি। তবে ময়ূরের পেখম কুলে নাচ দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছি। ময়ূর এভাবে পেখম কুলে নাচার দৃশ্য টিভি বা অন্যান্য মাধ্যমে দেখতে ফেলেও সরাসরি কখনও দেখি নাই। তাই ময়ূরের এমন পেখম কুলে নাচার দৃশ্য দেখে সত্যিই অভিভুত হয়েছি।

চকরিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, গত ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ পাবনা থেকে প্রথম ১টি ময়ূর পার্কে আনা হয়। একই বছরের ২৪ মার্চ ১টি পুরুষ ময়ূর চট্টগ্রাম থেকে ক্রয় করে পার্কে আনা হয়। একই বছরের চাঁদপুরের কাকড়া মানিকের বাসা থেকে ১১টি ময়ূর উদ্ধার করা হয়। পরে এসব ময়ূর পার্কে আনা হয়। এরপর একই বছরের ১৩ এপ্রিল যৌথ বাহিনী নরসিংদী থেকে ২টি ময়ূর জব্দ করে পার্কে পাঠান।

২০১১ সালের ১ লা জুন সিলেটের শ্রীমঙ্গল থেকে ১টি পুরুষ ময়ূর, একই বছরের ১৯ জুলাই যমুনা ইকো পার্ক হতে আরেকটি পুুরুষ ময়ূর পার্কে পাঠানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের হালিশহর রেলগেট এলাকা থেকে ১টি পুরুষ ও ১টি মহিলা ময়ুর উদ্ধার করে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে পাঠানো হয়।

সবমিলিয়ে ১৯টি ময়ূর পার্কে ছিলো। এরমধ্য থেকে একটি ময়ূর যমুনা ইকো পার্কে প্রেরণ করা হয়। এরপর ২০০৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে ৪টি ময়ূর মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে পার্কে ১৪টি ময়ূর রয়েছে। এরমধ্যে ৭টি পুরুষ এবং ৭টি মহিলা ময়ূর। ইতোমধ্যে কয়েকটি মহিলা ময়ূর ডিম দেয়ার সময় হয়ে এসেছে। আশা করছি এই মাসের মধ্যে আরও কিছু ময়ূরের বাচ্চা পাবো।

তিনি আরও বলেন, ময়ুররা সাধারণ মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসে পুরুষ ময়ূররা পেখম কুলে রাখে। মুলত পুরুষ ময়ূররা মহিলা ময়ূরদের আকৃষ্ট করার জন্য পেখম কুলে নাচতে থাকে। আর মহিলা ময়ূরদের পেখম থাকেনা। বর্ষকালে ময়ূররা পেখমু কুলে নাচে এটা আমাদের ভ্রান্ত ধারণা। বর্ষা মৌসুমে সাধারণত ময়ূরদের পেখম শরীর থেকে ঝড়ে পড়ে যায়। বর্ষা শেষ হলে আবারও পেখম উঠতে শুরু করেন।