কক্সবাজারের ৫ উপজেলায় ভোটযুদ্ধ আজ

বিশেষ প্রতিবেদক :

বহুল প্রতীক্ষা শেষে পঞ্চম উপজেলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের আওতায় আজ ২৪ মার্চ রোববার অনুষ্ঠিত হবে কক্সবাজারের পাঁচ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। আজ সকাল ৮ থেকে শুরু হবে ভোটযুদ্ধ। জেলার মহেশখালী, পেকুয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ভোটযুদ্ধ হবে। কুতুবদিয়া উপজেলাও এই ধাপের আওতায় থাকলেও শেষ মুহুর্তে এসে তা স্থগিত হয়ে গেছে।

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, আজ কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, পেকুয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই ভোটযুদ্ধে পাঁচ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১২জন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে-২৯ জন এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে আটজন মোট ৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মহেশখালীতে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দুইজন। পেকুয়ায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে তিনজন। রামুতে চেয়ারম্যান পদে দুইজন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে চারজন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে তিনজন। উখিয়া চেয়ারম্যান পদে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কামরুন্নেছা বেবি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ভাইস-চেয়ারম্যান পদে আটজন রয়েছেন। টেকনাফে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে আটজন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশখালী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী হোছাইন ইব্রাহিম, স্বতন্ত্র প্রার্থী বড়মহেশখালী ইউনিয়নের সাবেক দু’বারের চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা ও উপজেলা যুবদলীগের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম। তবে মূল লড়াই হতে পারে হোছাইন ইব্রাহিম ও শরীফ বাদশার মধ্যে। পেকুয়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এস.এম গিয়াস উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে। শেষ মুহূর্তে এসে গিয়াস উদ্দীনের পক্ষে ভোটারদের সমর্থন বেড়েছে বলে জানা গেছে। রামুতে চেয়ারম্যান পদে হচ্ছে তীব্র প্রতিযোগিতা। কারণ মাত্র দুইজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একজন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী রিয়াজুল আলম অন্যজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। প্রচার-প্রচারণায় দুই প্রার্থীই তুমুল প্রতিযোগিতা চালাচ্ছেন। ভোটের হিসাবেও দুইজন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করার আভাস রয়েছে। উখিয়ায় চেয়ারম্যান পদে হামিদুল হক চৌধুরী এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কামরুন্নেসা বেবি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সর্বোচ্চ আটজন প্রার্থী। এরমধ্যে অধিকাংশই প্রতিযোগিতায় রয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট না হওয়া উখিয়া কিছুট নিরুত্তাপ রয়েছে ভোটের পরিবেশ।

সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে হবে তুমুল ভোটযুদ্ধ। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী করছেন তিনজন শক্তিমান প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নূরুল আলম। ভোটের হিসাবে তিনজনই সমানে সমান রয়েছেন। তবে কে হতে যাচ্ছেন আগামীর টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান, তা এখন পর্যন্ত অনুমান করা যায়নি।
জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলার পাঁচ উপজেলার ভোটগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্ততি নিয়ে কাজ করা হবে। ভোটগ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পাঁচ উপজেলায় ৪৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রতি উপজেলায় একজন করে জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। তাদের পাশপাশি থাকবেন ৩০ প্লাটুন বিজিবি ও ৬ প্লাটুন র‌্যাব। এছাড়া পর্যাপ্ত আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন কবেন। উপকূলীয় এলাকা হিসেবে মহেশখালী উপজেলা ও টেকনাফের সেন্টমার্টিনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোস্টগার্ড সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইদুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘জেলার প্রথম নির্বাচন চকরিয়া উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে নির্বাচনটি আমরা অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। আগামীকালের (আজকের) নির্বাচনগুলোও এমনভাবে সম্পন্ন করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই সেভাবে ভোট গ্রহণ করা হবে।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বি কোন পক্ষকে বিন্দু পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করতে সুযোগ দেয়া হবে না। অত্যন্ত শান্তিপুর্ণ, ভীতিমুক্ত, নিরাপদ ভোটারবান্ধব পরিবেশে ভোট গ্রহন করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনে কোন ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা, সন্ত্রাস, পরিবেশকে অশান্ত করতে চাইলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’