কক্সবাজারে পিতার দেয়া আগুনে পুড়লো মা : এতিম সন্তানের আহাজারী

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার :

হয়ত শেষ বারের মতো পলিথিন মোড়ানো মায়ের নিথর দেহটা দেখছে। মা মা বলে ডাকছে! কিন্ত নিয়তি তার, সেই মা আজ নিরব নিস্তব্ধ! অঝুরে কাদঁলেও সেই কান্না মায়ের কান পর্যন্ত পৌছছে না। পলিথিন মোড়ানো মায়ের লাশ যখন মিনি ট্রাকে তুলে নিয়ে আসা হচ্ছে লাশ ঘরে। তখনও অবুঝ শিশুটা বুঝতে পারনি, তাদের পিতার দেয়া আগুনে লাশ হলো মা। এমন নির্মম ও অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামে।

মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারী) ভোর রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান গৃহবধু রুমা আকতার (২৫)। গত ২৮ জানুয়ারী স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার শরীরে আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়।

এলাকাবাসি ও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের ওবাইদুল হকের ছেলে মো. ওয়াহেদ প্রেমের সম্পর্ক করে পালিয়ে বিয়ে করেন চৌফলদন্ডি ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া পাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে রুমা আকতার (২৫ কে। বিয়ে পর থেকে ছেলের পরিবার রুমাকে মেনে না নিলেও তাদের কুল জুড়ে আসে একটি ছেলে সন্তান। তার বয়স আনুমানিক ৫ বছর।

আরো জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারী রাতে স্বামী ওয়াহেদ ও স্ত্রী রুমা আকতারের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে গৃহবধু রুমা আকতারের শরীরের আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে রুমার শরীরের কোমর থেকে নিচের অংশ ঝলসে যায়। গৃহবধুর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে রুমাকে উদ্ধার করে প্রথমে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ ও এলাকাবাসি সুত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর ৩টার দিকে মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়েন গৃহবধু রুমা। মঙ্গলবার সকালে রুমার মৃত দেহ কৌশলে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বেলা ১টার দিকে ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক শাহাজ উদ্দিন সহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রুমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরির্দশক শাহাজ উদ্দিন বলেন, গৃহবধু রুমার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী পূর্বক ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, গৃহবধুর শরীরে আগুনে পোড়ার চিহ্ন রয়েছে। কোমর থেকে নিচে পা পর্যন্ত আগুনে পুড়ে ঝলসে গেছে।

এদিকে, গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করে মিনি ট্রাকে তুলে যখন ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে আনা হয়, তখন গৃহবধুর ৫ বছর বয়সী শিশু সন্তানও সেখানে আসেন। তার মাকে যখন পলিথিন মুড়িয়ে মর্গে আনা হচ্ছে, সে মুহুর্তে তার শিশু সন্তান বার বার ‘মা মা’ বলে চিৎকার দিচ্ছে। কিন্তু শিশুর চিৎকার ততক্ষণে মাঝের কান পর্যন্ত পৌছেনি। এ করুণ দৃশ্য দেখে সেখানে পড়ে যায় কান্নার রুল। কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আসাদু জ্জামান বলেন, ঘটনার ব্যাপারে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনা জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।